নিউজ ব্যাংক ২৪. নেট : ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সাগর মোড়ল’কে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যাকান্ডের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ৫ জনকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০।
১১ ডিসেম্বর সোমবার রাত আনুমানিক ৮ ঘটিকায় ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানধীন শুভাঢ্যা পূর্বপাড়া এলাকায় সাগর মোড়ল (২৭) নামের এক সিসি টিভি ক্যামেরা ও থাই এন্ড এ্যালুমিনিয়াম টেকনিশিয়ান কতিপয় দুর্বৃত্তরা দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে নৃশংসহভাবে হত্যা করে।
উক্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের চাচা বাদী হয়ে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-১৭ তারিখ-১২/১২/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/৩২৩/৩৪ দণ্ড বিধি। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। র্যাব-১০ উক্ত হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানতে পেরে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৩ ডিসেম্বর বুধবার আনুমানিক ভোর ৪ টা ৪৫ মিনিটে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে। উক্ত অভিযানে চাঞ্চল্যকর সাগর হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত এজাহার নামীয় পলাতক আসামী ১। শেখ মোঃ রুবেল (৩১), পিতা-মোঃ দরবেশ আলী, সাং-সাবান ফ্যাক্টরী, থানা-দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ, জেলা-ঢাকা (ভাসমান)’কে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ মোঃ রুবেলের স্বীকারোক্তি ও তার দেয়া তথ্যমতে র্যাব-১০ এর অপর একটি আভিযানিক দল একই তারিখ দুপুর ১ টা ৩০ মিনিট ঘটিকা হতে বিকাল ৫ টা ৩০ ঘটিকা পর্যন্ত ঢাকার জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ এলাকায় একাধিক অভিযান পরিচালনা করে। উক্ত অভিযানে চাঞ্চল্যকর সাগর হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত এজাহার নামীয় পলাতক আসামী ২। মোঃ রাহাত (২১), পিতা-মোঃ আবুল কাসেম, সাং-হিজলতলা, চুনকুটিয়া, থানা-দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ, জেলা-ঢাকা, মোঃ রাসেল ওরফে কালা রাসেল (২৭), পিতা-মৃত জনাব আলী, সাং-শুভাঢ্যা পূর্বপাড়া, থানা-দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ, জেলা-ঢাকা (ভাসমান) এবং তদন্তে প্রাপ্ত পলাতক আসামী ৪। মোঃ নাহিদ (২৪), পিতা-দ্বীন ইসলাম, গ্রাম-শুভ্যাড্যা পূর্বপাড়া, থানা-দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ, জেলা-ঢাকা ও ৫। মোঃ বাবুল ইসলাম (২৩), পিতা-মৃত মফিজ উদ্দিন, গ্রাম-সন্নাসীপাড়া, থানা-কলমাকান্দা, জেলা-নেত্রকোনা’দেরকে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ভিকটিম সাগর মোড়ল দীর্ঘদিন যাবত ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন চুনকুটিয়া এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন এবং দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের শুভাঢ্যা পূর্বপাড়া এলাকায় একটি থাই এ্যালুমিনিয়ামের দোকানে কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় সিসি টিভি ক্যামেরার কাজ করতেন। গ্রেফতারকৃত আসামীরা রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় বসবাস করতো। তারা উক্ত এলাকায় মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন, চুরি ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন প্রকার অপকর্ম করে আসছিল। উক্ত এলাকার বিভিন্ন স্থানে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন করার কারণে তাদের মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন প্রকার অপকর্মের কাজে ব্যঘাত সৃষ্টি হতো। এ কারনে আসামীরা ভিকটিম সাগরকে উক্ত এলাকায় সিসি টিভি ক্যামেরার কাজ করতে নিষেধ করে এবং এ নিয়ে ভিকটিম সাগরের সাথে আসামীদের বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। উক্ত ঘটনার জের ধরে আসামীরা ভিকটিম সাগরের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে উচিত শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ ডিসেম্বর সোমবার আনুমানিক রাত ৮ টা ঘটিকায় ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন শুভাঢ্যা পূর্বপাড়া এলাকার থাই এ্যালুমিনিয়ামের দোকানে কাজ করাকালীন সময়ে আসামীরা ভিকটিম সাগরকে তার সাথে কথা আছে বলে দোকান থেকে বের করে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। বিষয়টি ভিকটিম সাগরের সহকর্মী শান্ত এর সন্দেহ হলে সে তাদেরকে অনুসরণ করতে থাকে। অতঃপর আসামীরা সাগরকে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছা মাত্র পূর্ব হতে ওতপেতে থাকা অন্যান্য আসামীরা মিলে তাদের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিম সাগরকে প্রথমে কাঠের রোলার দিয়ে এলোপাথাড়িভাবে আঘাত করতে থাকে এবং একপর্যায় তাদের কাছে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে ভিকটিম সাগরের বাম পায়ের হাটুতে এবং বুকের বাম পাশসহ শরীরের বিভিস্থানে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। ভিকটিম সাগরের সহকর্মী শান্ত ডাকচিৎকার করে সাগরকে বাচানোর চেষ্টা করলে আসামীরা শান্তকেও মারধর করে ভিকটিম সাগরকে ঘটনাস্থলে ফেলে রেখে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে ভিকটিম সাগরের সহকর্মী শান্ত স্থানীয় লোকজনদের সহযোগীতায় সাগরকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, মিডফোর্ড ঢাকায় নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাগরকে মৃত ঘোষণা করেন। গ্রেফতারকৃত আসামিদেরকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।