নিউজ ব্যাংক ২৪. নেট : সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহেরের ৪৫ তম ফাঁসি দিবস উপলক্ষে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা পরিচালিত অদম্য পাঠশালার আয়োজনে বুধবার ১১ অক্টোবর বিকেল ৪ টায় নিতাইগঞ্জ ঋষিপাড়া মাঠে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অদম্য পাঠশালার শিক্ষক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সদস্য সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আলোচনা করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সুলতানা আক্তার, অদম্য পাঠশালার শিক্ষার্থী শিমলা আক্তার, পূজা রানী দাস, নুপুর দাস, পূর্ণিমা দাস প্রমূখ।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কর্ণেল তাহের ছিলেন ১১ নং সেক্টর কমান্ডার। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য কৃতিত্ব রাখার জন্য তিনি বীরউত্তম খেতাব লাভ করেন। তিনি ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে অফিসার হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৬২ সালে কমিশন প্রাপ্ত হন। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে কাশ্মীর আর শিয়ালকোটে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধে অসামান্য অবদানের কারণে একমাত্র বাঙালী অফিসার হিসেবে তাকে মেরুন প্যারাস্যুট উইং নামক সম্মাননা প্রদান করা হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে তাহের কমান্ডো প্রশিক্ষক হিসাবে কাজ করেন।
বক্তারা আরও বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি এবং তার পরিবার গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা পালন করেন। একই পরিবারের ৬ ভাই সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাহের সম্মুখ সমরে আহত হন এবং এক পা হারান। মুক্তিযুদ্ধের পরে তাহের প্রথমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে দায়িত্ব পালন করেন, কিন্তু নীতি ও আদর্শগত কারণে পদত্যাগ করেন। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর তার নেতৃত্বে ঐতিহাসিক সিপাহী বিপ্লব সংঘটিত হয়। সিপাহী বিপ্লবের সময় তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াউর রহমানকে কারামুক্ত করেন। কিন্তু পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান ক্ষমতাসীন হয়ে এক মিথ্যা হত্যা মামলায় তাহেরকে সামরিক আদালতে মৃত্যুদন্ড দেয় এবং ১৯৭৬ সালে ২১ জুলাই তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১১ সালে ২২ মার্চ বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে কর্নেল তাহেরের ফাঁসির রায়কে অবৈধ ঘোষণাা করেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, কর্নেল তাহেরের স্বপ্ন ছিল শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের। ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা পাওয়ার পর যখন দেশে ধনীক শ্রেণির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন থেকেই তিনি শোষণ মুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যান। তার সামরিক বাহিনী ত্যাগ, সিপাহী বিপ্লব সংঘটিত করা সবই ছিল সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে। সাজানো মামলায় তার ফাঁসি রায় দেয়ার পরও তিনি সত্য, ন্যায়, শোষণমুক্ত দেশ প্রতিষ্ঠায় নির্ভিক থেকেছেন। শাসক গোষ্ঠীর দমন-পীড়নের মুখেও নিশঙ্ক চিত্তে ফাঁসির দড়ি গলায় নিয়েছেন। আজকের বাস্তবতায় যখন সরকার ছাত্রদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে, শিক্ষাকে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত করছে, মাদক-অপসংস্কৃতির প্রভাবে ছাত্র-যুব সমাজের মধ্যে নৈতিক অবক্ষয় নামিয়ে এনেছে, তখন ছাত্র-যুব সমাজের সামনে তাহেরের সংগ্রামী জীবন থেকে শিক্ষা নেয়া খুবই জরুরি।
নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা মোকাবিলায় বর্তমান সরকারের ব্যর্থতায় প্রায় দেড় বছরেও সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করতে পারেনি। করোনাকালে সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় লাখ লাখ ছাত্র- ছাত্রীর শিক্ষাজীবন অকালে শেষ হয়ে গিয়েছে। শিক্ষকরাও মারাত্মক আর্থিক দুর্দশায় পড়েছেন। নেতৃবৃন্দ করোনাকালে শিক্ষার্থীদের বেতন-ফি মওকুফ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নগদ সহায়তা এবং অবিলম্বে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেও ভ্যাকসিন দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করার দাবি জানান।