নিউজ ব্যাংক ২৪. নেট : বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট ও চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রয়াত কমরেড জাহেদুল হক মিলু’র ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার ২১ জুন বিকাল ৫ টায় বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে দলের জেলা কার্যালয়ে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৩ জুন কমরেড মিলু সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে দীর্ঘ এক মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে মৃত্যুবরণ করেন।
স্মরণ সভায় প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতা কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ। বাসদ জেলা কমিটির আহ্বায়ক নিখিল দাসের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন বাসদ জেলা কমিটির সদস্যসচিব আবু নাঈম খান বিপ্লব, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, বাসদ সোনারগাঁ উপজেলার সমন্বয়ক বেলায়েত হোসেন, ফতুল্লা থানার আহ্বায়ক এম এ মিল্টন, জেলা কমিটির সদস্য এস এম কাদির, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলার সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আক্তার, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের জেলার আহ্বায়ক প্রদীপ সরকার।
কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, এদেশের বিপ্লবী আন্দোলনে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র কমরেড জাহেদুল হক মিলু। কমরেড মিলু ছিলেন আমৃত্যু বিপ্লবী। দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যুক্ত থেকে সারা দেশে বিশেষত উত্তরবঙ্গে আমাদের দল ও মেহনতি মানুষের সংগ্রামকে বিকশিত করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। দল ও
বিপ্লবের স্বার্থই তার কাছে ছিল সর্বাগ্রে। রাজনৈতিক সংগ্রাম করতে গিয়ে নানা সময়ে শাসকদের নানা আক্রমণ, নির্যাতন-নিপীড়ন তিনি যেমনি হাসিমুখে বরণ করেছেন তেমনি দলের মধ্যেও নানা সমালোচনাকে তিনি খোলা মনে গ্রহণ করে নিজেকে প্রতি মুহুর্তে একজন সমাজ পরিবর্তনের সৈনিক হিসেবে গড়ে তোলার সংগ্রাম করেছেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এই লড়াইয়ে ছিলেন অবিচল। সকল রকমের অহমিকা ও আত্মম্ভরিতা থেকে মুক্ত কমরেড মিলুর চরিত্র এদেশের তরুণ বিপ্লবীদের জন্য জ্বাজ্জল্যমান শিক্ষা হয়ে আছে। নিজের স্বার্থকে কীভাবে বিপ্লবী আন্দোলনের সাথে একাত্ম করে দেয়া যায় কমরেড মিলু তার অনন্য উদাহরণ ।
তিনি আরও বলেন, আজ যখন আমরা এই স্মরণসভা করছি গোটা দেশের মানুষ তখন নানাবিধ সংকটে জর্জরিত। সিলেট-সুনামগঞ্জসহ দেশের একটা বৃহৎ অঞ্চল বন্যা কবলিত। ৪০ লাখ মানুষ পানিবন্দী। আগে থেকে সতর্কবার্তা থাকলেও এই বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের কোন প্রস্তুতিই ছিল না। সরকার ব্যস্ত ছিল পদ্মা সেতু নিয়ে তথাকথিত উন্নয়নের গল্প প্রচারে। এখনো বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা খুবই দুর্বল ও অপর্যাপ্ত। পত্রিকায় খবর আসছে বিভিন আশ্রয় কেন্দ্রে তীব্র খাদ্য সংকট, পানীয় জলের অভাব। মানুষ এক চরম মানবেতর অবস্থায় জীবন যাপন করছে। আমাদের দলের উদ্যোগে সীমিত সামর্থ্যে আমরা মানুষের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করছি। সেখানেও ক্ষমতাসীনরা বাধা দিচ্ছে। অন্যান্য রাজনৈতিক সামাজিক শক্তিগুলোও পাশে দাঁড়াচ্ছে। একদিকে এই বন্যা পরিস্থিতি আবার দফায় দফায় গ্যাস, বিদ্যুত, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে। চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ চরম সংকটে দিনাতিপাত করছে। কিন্তু পত্রিকায় খবর এসেছে সুইস ব্যাংকে যেকোন সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি অর্থ জমা হয়েছে, গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ৫৫ ভাগ। প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি
টাকা এই একটি ব্যাংকেই জমা আছে। এরা একদিকে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। এবারের বাজেটেও এই পাচারকৃত অর্থ দেশে আনার জন্য বিশেষ কর রেয়াতের ঘোষণা দিয়েছে যা, অর্থ পাচারকে উৎসাহিত করা ছাড়া ভিন্ন কোন ফল বয়ে আনবে না। এই বাজেটে জনগণের শিক্ষা, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য, কৃষি, সামাজিক নিরাপত্তা খাত ইত্যাদি জনগুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো উপেক্ষিত থেকেছে। বিশাল বিশাল মেগা প্রজেক্টের বরাদ্দ অব্যাহত আছে। এই সকল প্রকল্পের ব্যয় তার প্রারম্ভিক ব্যয়ের তুলনায় আট থেকে দশ গুণ করে বাড়ছে। জনগণের টাকা দেদারসে লুটপাট করে একদল মানুষ রাতারাতি অঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। মানুষের ভাত-কাপড়ের অধিকার যেভাবে কেড়ে নেয়া হয়েছে একইভাবে জনগণের ভোটের অধিকারকেও যাদুঘরে পাঠানো হয়েছে। সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ধ্বসে পড়েছে। ডিজিটাল
নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন কালা কানুন করে ভিন্ন মত দমনের নানা ঘটনা প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় ঠাই
পাচ্ছে। এভাবে এই সরকার চূড়ান্ত গণবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং জনবিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। আমলাতন্ত্র, পুলিশ ও দলীয় গু-াবাহিনীর উপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে বর্তমান সরকার। এই দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেতে হলে সকল বাম গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ লড়াই আজ সময়ের দাবি। গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের ন্যূনতম শর্তে সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে রাজপথে লড়াইয়ে নামার আহ্বান জানান কমরেড খালেকুজ্জামান।
নিখিল দাস বলেন, মার্কসবাদী দর্শনকে জীবনদর্শন হিসেবে ধারণ করে শোষিত মানুষের মুক্তির সংগ্রামে তাদের অবদান আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। আজ পুঁজিবাদী শোষণ, ভোগবাদের সমাজ মানসিকতা ও সাম্রাজ্ব লুণ্ঠন, দুর্নীতি-লুটপাট এবং ক্ষমতাসীনদের ফ্যাসিবাদী আক্রমণ যেমন জনজীবনকে দুর্দশায়নি পতিত করেছে তার চেয়েও ভয়ংকর আক্রমণ নেমেছে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ও নৈতিক মূল্যবোধের উপর। এই অসহনীয় অবস্থা থেকে মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে কমরড জাহেদুল হক মিলুর সংগ্রাম আমাদেরকে পথ দেখাবে।
আবু নাঈম খান বিপ্লব বলেন, শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থকে প্রতিষ্ঠা করতে কমরেড জাহেদুল হক মিলু আজীবন সংগ্রাম করেছেন। আজও শ্রমিকরা বাঁচার মতো ন্যূনতম মজুরি পাচ্ছে না। গণতান্ত্রিক শ্রম আইন, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার থেকে শ্রমিকেরা বঞ্চিত। শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের মুক্তির সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে জয়যুক্ত করার মাধ্যমেই প্রয়াত কমরেড মিলুকে যথার্থ শ্রদ্ধা ও সম্মান
জানানো হবে।