নিউজ ব্যাংক ২৪. নেট : সবার জন্য খাদ্য অধিকার আইন নিশ্চিত ও কৃষকবান্ধব কৃষিনীতি গ্রহণের সুপারিশ গ্রহণের মধ্য দিয়ে দুই দিনের ‘এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের খাদ্য অধিকার এবং কৃষি খাদ্য ব্যবস্থা সম্মেলন-২০২৩’ সমাপ্ত হয়েছে। সমাপনী অধিবেশনে গৃহীত ঘোষণাপত্রে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের সুরক্ষার জন্য জলবায়ু সহনশীল, পরিবেশবান্ধব কৃষিব্যবস্থা গড়ে তোলা; কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থাকে ন্যায়সংগত ও টেকসই করার জন্য করপোরেট নিয়ন্ত্রিত কৃষিব্যবস্থার পরিবর্তে জনবান্ধব কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থা শক্তিশালী করা এবং কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থায় বহুবিধ অংশীদারত্ব গড়ে তোলার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ২৭ জুলাই বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন মিলনায়তনে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবীরের সভাপতিত্বে সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন খাদ্য অধিকার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মহসিন আলী।
আলোচনায় অংশ নেন সংসদ সদস্য মো. আইন উদ্দিন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রুহুল আমিন তালুকদার, নেপালের জাতীয় পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্ম সচিব ড. কিরণ রূপখেটি, ওয়েলট হাঙ্গার হিলফে, ভারতের দেশীয় প্রতিনিধি সাসমিতা জেনা, হেইফার ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড ওয়ান হেলথ এশিয়া রিজিওনের সিনিয়র ডিরেক্টর অব প্রগ্রাম দিলিপ ভাণ্ডারী প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান সরকারের পক্ষেই সম্ভব হয়েছে দেশকে খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত করা। বর্তমানে আমরা প্রায় চার কোটি ৫৫ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন করে থাকি, যদিও কৃষিজমি একটুও বাড়েনি। কৃষিসংক্রান্ত সকল প্রতিষ্ঠানে সরকারের সহায়তা থাকায় সরকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলেও পুষ্টি এখনো নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সে জন্য কাজ করছে। বর্তমান সরকার যতগুলো সামাজিক নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করেছে, আর কোথাও এমনটি নেই।’
সংসদ সদস্য মো. আইন উদ্দিন বলেন, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের সুরক্ষার জন্য সরকার সার, বীজ, কীটনাশক সুলভ মূল্যে সরবরাহ করছে। কৃষিব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানে ভর্তুকি দিচ্ছে। খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার মহামারি ও অর্থনৈতিক মন্দা উপেক্ষা করে বর্তমানে ১৯ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ করেছে।
অতিরিক্ত সচিব মো. রহুল আমিন তালুকদার বলেন, সরকার কৃষি খাতে বরাবরের মতো ভর্তুকি অব্যাহত রেখেছে। ফলে কভিড-পরবর্তী বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের সময়ও দেশ খাদ্য ঘাটতির সম্মুখীন হয়নি। বরং সরকার কৃষকদের জন্য নানা ধরনের প্রণোদনা বাজেটে বৃদ্ধি করেছে।
ড. কিরণ রূপখেটি বলেন, ‘নেপাল সরকার সকলের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে গৃহীত হয়েছে খাদ্য অধিকার সংক্রান্ত আইন, যা পুরোপুরি কার্যকর করা এখনো সম্ভব হয়নি। প্রযুক্তিগত রূপান্তরের সাথে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়টিকে যুক্ত করে আমাদের আরো পদক্ষেপ নিতে হবে।’
সাসমিতা জেনা বলেন, সমাজের সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য খাদ্য ও কৃষিব্যবস্থায় সুশাসন তথা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। অধিকারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কর্মসূচি গ্রহণ না করলে আমাদের জন্য টেকসই উন্নয়ন অধরাই থেকে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ‘ক্ষুদ্র খাদ্য উৎপাদনকারীদের বিবেচনা করে কৃষিতে ডিজিটাইজেশন’ শীর্ষক কারিগরি অধিবেশনে মো. আমিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের উদ্বোধনী ও সমাপনী ১০টি সেশনে দেশি-বিদেশি ছয় শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।