নিউজ ব্যাংক ২৪. নেট : র্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতার সহ আইনশৃঙ্খলার সামগ্রিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন অপরাধীদের গ্রেফতারসহ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় ডাকাতি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড দমনের লক্ষ্যে অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সাথে র্যাব জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও আইনের আওতায় আনার জন্য নিয়মিত সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে থাকে।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ থানা এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনা ঘটে। উক্ত ডাকাতি সংক্রান্ত ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে এলাকার সাধারণ জনগণ ও মহাসড়কে চলাচলরত যাত্রীসাধারণের মধ্যে ব্যপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। ডাকাতির ঘটনাগুলো নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় গণমাধ্যমসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন আকারে প্রকাশিত হয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে র্যাব ঘটনা সংক্রান্তে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলো পর্যালোচনা শুরু করে। লক্ষ্য করে দেখা যায় যে, গত বেশ কিছুদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে ঘটে চলা নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ থানা এলাকা ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দূর্ধষ ডাকাতির সবগুলি ঘটনা প্রায় একই ধাঁচের। এতে ধারণা করা যায়, একটি বড় সংঘবদ্ধ ডাকাত দল অত্র এলাকাসমূহতে পরিকল্পিতভাবে ডাকাতি করে আসছে। র্যাবের একটি চৌকস গোয়েন্দা দল গোপনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাত প্রবণ এলাকায় কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে এবং তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা এলাকার কিছু সক্রিয় ডাকাত সদস্যকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
র্যাব-১১, আদমজীনগর, নারায়ণগঞ্জ এর উপ- অধিনায়ক মেজর মোঃ হাসান শাহরিয়ার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গণমাধ্যমকে জানান, গোপন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১১, সিপিএসসি এর একটি আভিযানিক দল কর্তৃক ১৫ মে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে গভীর রাতে অভিযান পরিচালনা করে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ থানাধীন সোনাখালী এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে ডাকাতির প্রস্তুতি গ্রহণকালে ধারালো অস্ত্র ও ককটেলসহ সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের ০৬ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলোঃ ১। মোঃ আজিজুল ইসলাম (১৮), পিতা- মোঃ বাবুল হোসেন, সাং- নানাকি মধ্যপাড়া, ওলিপুর বাজার, থানা- সোনারগাঁও, জেলা- নারায়ণগঞ্জ; ২। মোঃ সাইফুল ইসলাম ওরফে সাইদুর (২০), পিতা- মোঃ শফিকুল ইসলাম, সাং- শারেং সরকার চাপাতলী, থানা-বন্দর, জেলা- নারায়ণগঞ্জ; ৩। মোঃ হৃদয় (১৮), পিতা- মোঃ দায়েন, সাং- নানাকি মধ্যপাড়া, ওলিপুর বাজার, থানা- সোনারগাঁও, জেলা- নারায়ণগঞ্জ; ৪। মোঃ তালিফ হোসেন (২৩), পিতা- মোঃ দেলোয়ার হোসেন, সাং ইটেরপুল, থানা-বন্দর, জেলা-নারায়ণগঞ্জ ৫। মোঃ রাজু আহম্মেদ (২২), পিতা- মোঃ ইব্রাহিম, সাং- হরিপুর সিড়ি ব্রীজ, থানা-বন্দর, জেলা-নারায়ণগঞ্জ এবং ৬। মোঃ ফারুক (১৯), পিতা- মোঃ ইব্রাহীম, সাং- নয়াপাড়া, ওলিপুর বাজার, থানা- সোনারগাঁও, জেলা- নারায়ণগঞ্জ।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এই চক্রটি গত ০১ এপ্রিল ২০২২ তারিখ গভীর রাতে সোনারগাঁ থানাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মাহবুব আলম এর পরিবারকে ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতি করেছিল। গ্রেফতারকৃত আসামীদের হেফাজত হতে
ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ০৩টি ককটেল, ০২টি চাইনিজ কুড়াল, ০১টি চাপাতি, ০২টি ছোড়া, ০২টি লোহার রড, ০৬টি টর্চ লাইট ও ০২টি লোহার পাইপ উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও অধ্যাপক মাহবুব আলম এর নিকট হতে ডাকাতিকৃত তার ব্যবহৃত ০১টি মোবাইল ফোনও উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীরা সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সক্রিয় সদস্য বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছেন। এই সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রটি পরষ্পর যোগসাজশে পূর্ব-পরিকল্পনামাফিক ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলকারী গাড়ীসমূহকে টার্গেট করে তাদের ডাকাতি কার্যক্রম চালিয়ে
আসছিল। গভীর রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ থানার বিভিন্ন নির্জন স্থানে গাছ কেটে রাস্তায় ফেলে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে চলন্ত গাড়ীর গতিরোধ করে অতর্কিতভাবে হামলা করে এবং ধারালো অস্ত্র প্রদর্শণ করে চলাচলরত যাত্রী সাধারণদের ভয়ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি ও সাধারণ লোকজনদের জিম্মি করে ডাকাতি শেষে সিএনজি/মোটরসাইকেলযোগে দ্রুততার সাথে ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়। দুষ্কৃতিকারী এই ডাকাত দলের সদস্যরা ডাকাতি করতে গিয়ে কখনও কখনও জনসাধারণকে মারধর, ছুরিকাঘাত ও গাড়ি ভাংচুরসহ গুরুতর জখম এমনকি প্রাণনাশের মতো ঘটনাও ঘটিয়ে থাকে। দীর্ঘদিন দিন ধরে তারা নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ থানা এলাকায় এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন নির্জন স্থানে তাদের অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে ডাকাতি করে আসছিল।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।