নিউজ ব্যাংক ২৪ ডট নেট : ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সংঙ্গবদ্ধ চোরাই চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১ সদস্যরা। এ সময় তাদের কাছ থেকে চোরাইকৃত ৫টি অত্যাধুনিক স্মার্ট ফোন, ১টি স্বর্ণের চেইন, ১ জোড়া স্বর্ণের কানের দুল, ১টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যাপটপ ও নগদ ৫ হাজার ৯শ’ টাকা উদ্ধার করা হয়।
বুধবার ২৬ ফেব্রুয়ারী রাতে রাজধানীর ডেমরা এবং নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের নোয়াপাড়া ও সিদ্ধিরগঞ্জের বাঘমারা এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে র্যাব-১১ এর ব্যাটেলিয়ন সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১১ এর উপ-অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লীডার মোঃ রেজাউল হক এ তথ্য জানান। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন- র্যাব-১১’র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ নাজমুল হাসান। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মূলহোতা মোঃ শাহাজালাল ওরফে শাংখা (৩৫), আব্দুল কাদির জিলানী (১৯), মোঃ সাদ্দাম (২৪), আরিফুল ইসলাম ওরফে মিঠু (২৮), মোঃ নুর উদ্দিন ওরফে বাবু (২৯), মোঃ সুজন (২৩) ও মোঃ শাহিন মিয়া (৪০)।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের ওই কর্মকর্তা আরো জানান, ওই চোর চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও কুমিল্লা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কখনো বিয়ে বাড়িতে বরযাত্রীর ছ্বদ্ধ বেশে আবার কখনো গণপরিবহনে সাধারণ যাত্রীর ছদ¥বেশে স্বর্ণালংকার, মূল্যবান ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী তথা স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ ইত্যাদি ও নগদ টাকা চুরি করে আসছে। তিনি আরো জানান, এটি একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্র। এ চক্রের মূল হোতা মোঃ শাহজালাল ওরফে শাংখা। শাংখা মোঃ শাহজালালের খেতাবী নাম। এই চোর চক্র প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের চুরির কৌশল সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করে। তারা জানায় যে, চুরি কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে তারা বিয়ে বাড়িকে প্রধান টার্গেট হিসেবে নিয়ে থাকে। তারা বিয়ের নির্ধারিত তারিখে বরযাত্রীর ছদ্ববেশে বিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে। বিয়ে বাড়ির বিভিন্ন ঘরে প্রবেশ করে সুবিধাজনক সময়ে মূল্যবান জিনিসপত্র স্বর্ণালংকার, স্মার্টফোন, ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীসহ বিভিন্ন মালামালদ চুরি করে। এভাবে চুরির একটি মূল্যবান বস্তু তাদের হস্তগত হওয়া মাত্রই পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বিয়ে বাড়ির বাইরে অবস্থানরত তাদের দলের অন্যান্য সদস্যের কাছে হস্তান্তর করে যেন মূল চোর ধরা না পরে। এছাড়াও বিয়ে বাড়িতে তাদের অন্যতম টার্গেট হচ্ছে শিশু ও কিশোরী মেয়ে। বিয়ে বাড়িতে অতিথিদের ভিড়ের মুখে এই সমস্ত টার্গেট করা শিশু ও কিশোরীদের গলা থেকে স্বর্ণের চেইন মেরে ছিড়ে নিয়ে থাকে। শিশু ও কিশোরীরা বিয়ে বাড়িতে বিভিন্ন আনন্দে মেতে থাকায় অসাবধানতা বশতঃ এই চক্রের অন্যতম টার্গেট হয়ে থাকে। এভাবে সারাদিনব্যাপী বিয়ে বাড়িতে চুরি সম্পন্ন করে সেখান থেকে সু-কৌশলে চোরাইকৃত মালামালসহ টম্পট দেয়।
র্যাব আরো জানান, এই সংঘবদ্ধ চোর চক্রের অন্যতম আরেকটি টার্গেট হচ্ছে বিভিন্ন গণপরিবহন বাস, ট্রেন ও চঞ্চের যাত্রীরা। তাদের প্রধান টার্গেট পাঞ্জাবী ও ঢোলা কাপড় পরিহিত বিভিন্ন সাধারণ যাত্রী। এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে টার্গেটকৃত ব্যক্তির চারপাশে তারা অবস্থান নেয়। উক্ত ব্যক্তির পাঞ্জাবী বা ঢোলা কাপড়ের পকেট হতে ঔ ব্যাক্তির অজ্ঞাতসারে মোবাইল, মানিব্যাগ ও নগদ টাকা ইত্যাদি চুরি করে। মোঃ শাহজালাল ওরফে শাংখা’র নেতৃত্বে এই চোর চক্র ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও কুমিল্লা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় উল্লেখিত অভিনব কৌশল প্রয়োগ করে ছদ্ববেশে তাদের চুরি কার্যক্রম সম্পন্ন করে আসছে। পরবর্তীতে তারা চোরাইকৃত মালামাল মোঃ শাহজালাল ওরফে শাংখা’র নেতৃত্বে সম্মিলিতভাবে সারুলিয়া, ডেমরায় অবস্থিত জুয়েলারি দোকানসহ বিভিন্ন বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে। র্যাব আরো জানায়, বিগত প্রায় ১০ বছর ধরে এই সংঘবদ্ধ চোর চক্রটি এ ধরণের পেশায় জড়িত এবং তাদের চাতুর্য্যরে কারণে বিগত দিনে তারা কখনোই ধরা পড়েনি। সম্প্রতি চোর চক্রের প্রধান শাহজালাল ওরফে শাংখা তার শ্যালক আব্দুল কাদের জিলানীকে চুরি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে এই পেশায় নিয়োজিত করেছে। এভাবে বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ দিয়ে নতুন নতুন সদস্য তাদের দলের সাথে যুক্ত করে থাকে।