9 Kartrik 1431 বঙ্গাব্দ ০৯-১২-২০২২
Home / শিক্ষা ও তথ্য প্রযুক্তি / রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১৩ কোটি টাকা অডিটে গড়মিল !

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১৩ কোটি টাকা অডিটে গড়মিল !

নিউজ ব্যাংক ২৪. নেট :  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম ও গড়মিল ধরা পড়েছে। বাজেট বরাদ্দের অতিরিক্ত ব্যয়, ব্যাংক থেকে অর্জিত সুদ সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়া, ভর্তি পরীক্ষা থেকে আয়-ব্যয়ের হিসাব গোপন করা, বই ক্রয়ে অনিয়মিত ব্যয়, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে বিধি বহির্ভূত ব্যয়, ঋণ পরিশোধের নামে অতিরিক্ত ব্যয়, বিধি বহির্ভূত আল্ট্রাসাউন্ড মেশিনসহ মেডিকেল যন্ত্রাংশ ক্রয়ে অনিয়মিত ব্যয়সহ ২২টি বিষয়ের ওপর অডিট আপত্তি এসেছে। যেখানে এককভাবে আর্থিক অনিয়ম ও অসংগতি ১১২ কোটি ৯৭ লাখ টাকার ওপরে।

দেশের সর্বোচ্চ অডিট প্রতিষ্ঠান মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) থেকে প্রকাশিত ২০২২-২৩ নিরীক্ষা বছরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও ২৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অডিট ইন্সপেকশন রিপোর্টে এ অনিয়ম ওঠে এসেছে। এককভাবে আটটি বিষয়ের ওপর অডিট গড়মিল এসেছে। বাকি ১৪টি বিষয়ে সমন্বিত অডিট অনিয়ম এসেছে। যা প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌঁছেছে।

তাদের এ অনুসন্ধান নথিতে ওঠে এসেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেট বরাদ্দ ছিল ১৩৩ কোটি ৩৪ লাখ ২৪ হাজার টাকা। কিন্তু ব্যয় করেছে ১৬৪ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। ফলে বিভিন্ন খাতে বাজেট বরাদ্দের অতিরিক্ত ৩১ কোটি ১৭ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ব্যয় করেছে প্রশাসন। যা সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’-এর আওতায় সোনালী ব্যাংক, রাবি শাখা থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ২১ লাখ ৮৪ হাজার ৩৯৫ টাকা সুদ পায় রাবি প্রশাসন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী উক্ত অর্জিত সুদ সরকারি কোষাগারে জমা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উক্ত টাকা সরকারি কোষাগারে প্রদান করেনি। ফলে ২১ লাখ ৮৪ হাজার ৩৯৫ টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) ভর্তি পরীক্ষার নিরীক্ষাযোগ্য রেকর্ডপত্র ও আয়-ব্যয়ের প্রাপ্ত টাকার হিসাব উপস্থাপন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সিএজি নিরীক্ষা বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) ভর্তি পরীক্ষা থেকে ১৭ কোটি ৮২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা আয় করে রাবি। কিন্তু উক্ত আয় এবং ব্যয়ের অডিট উপস্থাপন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সিএজি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এই হিসাবের আয়-ব্যয় এবং সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র অডিট উপস্থাপনের জন্য চাহিদা প্রদান করা হলেও রাবি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো জবাব বা সহযোগিতা প্রদান করেনি।

এ নথি আরো বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বই ক্রয় বাবদ অনিয়মিতভাবে ২০ লাখ ৫৮ হাজার ৪৮৩ টাকা ব্যয় করে বিশ্ববিদ্যালয়। এ অনুচ্ছেদে বিস্তারিত বলা হয়, কোনোরূপ ক্রয়মূল্য ছাড়ায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এককে বিভাজন করে এই টাকা ব্যয় করে রাবি কর্তৃপক্ষ। বছরের শেষ দিন (৩০ জুন) ব্যয় দেখানোর উদ্দেশ্যেই এই ক্রয় সম্পাদন করেন তারা। যা সাধারণ আর্থিক বিধিমালা (জিএফআর) ১০৩ মোতাবেক আর্থিক নিয়ম ভঙ্গ করার শামিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন’ (প্রথম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পে ২০২১-২২ অর্থবছরে কার্যাদেশের শর্ত মোতাবেক নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পাদনে ঠিকাদার ব্যর্থ হওয়ায় ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা-২০০৮ (পিপিআর)’ মোতাবেক চুক্তি বাতিল ও ঠিকাদারের পারফরম্যান্স সিকিউরিটি বাজেয়াপ্ত না করায় ৬৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।

সিএজি কর্তৃপক্ষ আরো বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন’ (প্রথম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পে ২০২১-২২ অর্থবছরে কার্যাদেশের শর্ত মোতাবেক নির্ধারিত সময়ে সময় বৃদ্ধির আবেদন করতে ঠিকাদার ব্যর্থ হওয়ায় পিপিআর ২০০৮ মোতাবেক চুক্তি বাতিল না করে ঠিকাদারকে অনিয়মিতভাবে ৬ কোটি ৫১ লাখ ৬৬ হাজার ১০০ টাকা পরিশোধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেটে ঋণ গ্রহণ বাবদ প্রাপ্তি না দেখানো হলেও ঋণ পরিশোধের নামে বাজেটে ৫৫ কোটি ২৯ লাখ ১৪ হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে।

এ প্রতিবেদনে আরো উঠে এসেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে প্রারম্ভিক স্থিতি ১০১ কোটি ৯২ লাখ ৩০ হাজার টাকা, বিমক অনুদান ৪৩৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা এবং নিজস্ব সূত্রে আয়সহ মোট ৫৬০ কোটি ৫৫ লাখ ২২ হাজার টাকা প্রাপ্তি দেখিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে উক্ত প্রাপ্তির মধ্যে ঋণ গ্রহণ বা ঋণ প্রাপ্তি খাতে আয় হয়েছে এমন কোনো অর্থ বাজেটে প্রদর্শন করেনি বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু পরিশোধ খাতে থোক আকারে ঋণ পরিশোধের নামে ৫৫ কোটি ২৯ লাখ ১৪ হাজার টাকা ব্যয় দেখিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিট সেলের উপপরিচালক মো. মাসুম আল রশিদ বলেন, সিএজি কর্তৃপক্ষ যে বিষয়গুলোর ওপর আপত্তি জানিয়েছে সেগুলোর যৌক্তিক জবাব আমাদের কাছে আছে। আমরা খুব দ্রুতই তাদের কাছে জবাব পাঠাব। তবে দু-একটি বিষয়ে আমাদের যে ত্রুটি বিচ্যুতি হচ্ছে না যে তা নয়। তবে ভর্তি পরীক্ষার আয়-ব্যয়ের হিসাব না দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অডিট আপত্তির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব পরিচালক অধ্যাপক ড. শেখ শামসুল আরেফিন বলেন, অডিট আপত্তি একটি স্বাভাবিক বিষয়। প্রতি বছরই সিএজি কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানায়। তারপর আমরা জবাব দিয়ে বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করি। এটা এমন নয় যে এবারই প্রথম। এরকম প্রতি বছরেই হয়ে থাকে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় না; বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ মন্ত্রণালয়েও অডিট আপত্তি হয়ে থাকে। আপত্তি উঠেছে বলেই যে এখানে দুর্নীতি হয়েছে এমনটা বলা যাবে না।

আরও পড়ুন...

ছাত্র আন্দোলন আমাদেরকে অনেক কিছু শিখিয়েছে- মুহাইমিন জিহান

নিউজ ব্যাংক ২৪. নেট : নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এ মুহাইমিন আল জিহান …