নিউজ ব্যাংক ২৪. নেট : জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামালউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘মানবাধিকার বিষয়টি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গণমাধ্যমের নিত্য চর্চার বিষয়। এ কারণে গণমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মীদের কাজ একই ধরনের। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় কমিশন নিবিড়ভাবে কাজ করে থাকে। এ পর্যন্ত দেশের যে প্রান্তেই সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছে, কমিশন সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মুক্ত গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সুরক্ষা একে অপরের পরিপূরক।’
মঙ্গলবার ২ এপ্রিল রাজধানীর একটি হোটেলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের আয়োজনে ‘মানবাধিকার সুরক্ষায় গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকা’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু নিজেই ছিলেন গণমাধ্যমবান্ধব এক রাজনৈতিক নেতা। গণমাধ্যমের সঙ্গে তার ছিল এক নিবিড় সম্পর্ক।’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পুলিশও অনেক সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের কাজ করে। সবাই যে করে তা নয়। দেখা গেল, পুলিশ পরিচয়ে কাউকে তুলে নেওয়া হলো। এমন কিছু হলে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পিবিআই, সিআইডিসহ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে কাজ করি। পুলিশ সদস্যরা শাস্তির আওতায় এসেছে।’
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ‘পরিপ্রেক্ষিত’-এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। তিনি বলেন, ‘কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বিশ্বজুড়ে ৯৯ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। সংবাদ প্রকাশের জন্য নিপীড়িত, নির্যাতিত সাংবাদিকদের সংখ্যা সহস্রাধিক। বিশ্বে মানবাধিকারের পক্ষে কাজ করার জন্যই তাদের হত্যা করা হয়েছে। নিপীড়িত প্রত্যেক সাংবাদিক একজন মানবাধিকার যোদ্ধা।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্মই হয়েছে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে দিয়ে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৩০ লাখ মা-বোনকে হত্যা করা হয়েছে। সাংবাদিক সাগর-রুনির হত্যার তদন্তে গত একযুগে ১০৭ বার সময় নেওয়া হয়, সেখানে আমাদের মানবাধিকার কোথায়?’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে একটি মানবিক দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। সবাই মিলে একটি মানবিক দেশ গড়ে তুলতে হবে।’
জাতীয় মানবাধিকার বিষয়ক উপস্থাপনা তুলে ধরেন কমিশনের পরিচালক কাজী আরফান আশিক। তিনি বলেন, ‘ভুয়া মানবাধিকার সংগঠন ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের নাম নিয়ে অনেক ভুয়া সংগঠন মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার করার নামে প্রতারণা করছে।’
আলোচকরা বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের অন্যতম লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে গণমাধ্যম। বিশ্বে যে দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি যত খারাপ সেই দেশে গণমাধ্যম তত শৃঙ্খলিত। যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রবণতা বেশি, সেখানে গণমাধ্যম তত সংকুচিত এবং ততটাই ঝুঁকিতে। তাই মুক্ত গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সুরক্ষা একে অপরের পরিপূরক।
সভায় মানবাধিকার সাংবাদিকতা বিকাশে সাংবাদিকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, আইনি সুরক্ষা, সঠিক তথ্য প্রাপ্তি সহজ করার সুপারিশ করা হয়। মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, গত বছর জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে ২৮২টি অভিযোগ পেয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের এ সব অভিযোগের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১৩০টি অভিযোগ।
সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন কমিশনের সচিব সেবাস্টিন রেমা। আরও উপস্থিত ছিলেন ইউএনডিপি (জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি) বাংলাদেশের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য সেলিম রেজা।