নিউজ ব্যাংক ২৪ ডট নেট : নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার ১৪০ তম জন্ম ও ৮৮ তম মৃত্যুদিবস উপলক্ষে সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার সাথে যুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের যৌথ উদ্যোগে বুধবার ৯ই ডিসেম্বর বিকাল ৩ টায় সংগঠনের ২ নং রেলগেটস্থ র্কাযালয়ে আলোচনাসভা ও শহরে র্যালী অনুষ্ঠিত হয়।
সকালে সরকারি মহিলা কলেজে অবস্থিত বেগম রোকেয়ার ভাস্কর্যে মহিলা ফোরাম ও ছাত্র ফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের জেলার সংগঠক খায়রুন্নাহারের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়ক নিখিল দাস, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল কাদেরী জয়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সুলতানা আক্তার, অর্থ সম্পাদক মুন্নি সরদার, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের জেলার সংগঠক রাজলক্ষ্মী।
নেতৃবৃন্দ বলেন,আজ মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যু দিবস। ১৮৮০ সালের এই দিনে তিনি রংপুরের মিঠাপুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বিংশ শতাব্দীর শুরুতেই বেগম রোকেয়া তার লেখনি দ্বারা তৎকালীন মুসলিম সমাজের কুসংস্কার প্রথার বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। তিনি নারী শিক্ষা ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার ছিলেন। স্কুল করতে গিয়ে কাঠমোল্লাদের অভিসম্পাত কুড়িয়েছেন। নারী মস্তিষ্ক দিয়ে যে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারেন, তারাও যে বিজ্ঞানী, দার্শনিক হতে পারেন তা তিনি তার রচনা “সুলতানার স্বপ্ন” তে দেখিয়েছেন। নারী মুক্তি প্রশ্নে নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অপরিহার্য তা তিনি “পদ্মরাগ” উপন্যাসে তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন ”আমরা সমাজেরই অর্ধাঙ্গ। আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কিরূপে?” তিনি অভিযোগের সুরে লিখেছেন “যখনই কোন ভগ্নি মস্তক উত্তোলনের চেষ্টা করিয়াছেন, অমনই ধর্মের দোহাই বা শাস্ত্রের বচনরূপ অস্ত্রাঘাতে তাহার মস্তক চূর্ণ হইয়াছে।” পৈত্রিক সম্পত্তিতে নারী পুরুষের অর্ধেক পাওয়াকে কেন্দ্র করে তিনি লিখেন, আমরা ঈশ^ও ও মাতার নিকট ভ্রাতাদের অর্ধেক নাই। পুত্র যদি মায়ের পেটে ১০ মাস ১০ দিন থাকে কন্যা কি থাকে না ? তিনি শুধু নারী মুক্তি বা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলেননি। তৎকালীন বৃটিশ শাসন-শোষণের বিরুদ্ধেও বলেছিলেন। তাঁর জ্ঞানফল ও মুক্তিফল এমন দুটি রচনা।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন বেগম রোকেয়া স্বপ্নের সেই নারীমুক্তি আজো আসেনি। ঘরে বাইরে নারী নির্যাতন-হত্যা-ধর্ষণ ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্পত্তিতে নারীর সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি। বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে ধর্মীয় আলোচনার নামে নারী বিদ্বেষি বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি নারী পতি সহিংসতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। সহিংসতা-ধর্ষণ-হত্যা পূর্বের কোন সময়ের তুলনায় বহুগুণ বেড়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য মতে গত ৯ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৯৭৫ টি, তার মধ্যে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ২০৮ টি। ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ৪৩ টি। ধর্ষণের শিকার ১২ জন আত্মহত্যা করেছে। এই হচ্ছে আমাদের দেশের অবস্থা। এইভাবে নারীদের কে অন্ধকারে রেখে একটা দেশ কখনো আধুনিক হতে পারে না।
তাই ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জে মাসব্যাপী গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে জনপ্রতিনিধি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এবং জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্বারকলিপি পেশ করা হবে।