নিউজ ব্যাংক ২৪. নেট : দখল ও দূষণের হাত থেকে শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা রক্ষা কর। দূষণ ও দখলকারীদের কঠোর শাস্তি দাও। প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষা কর। পরিবেশ রক্ষায় পলিথিন বন্ধ কর। প্রতিপাদ্য স্লোগানকে সামনে রেখে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ নারায়ণগঞ্জ জেলার উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে রবিবার ৫ জুন সকাল ১০ টায় দখল ও দূষণের হাত থেকে শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা রক্ষা, দূষণ ও দখলের জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষায় পলিথিন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চের উপদেষ্টা বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্যসচিব আবু নাঈম খান বিপ্লব, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শরীফউদ্দিন সবুজ, কবি রঘু অভিজিৎ রায়, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের নারায়ণগঞ্জ জেলার সংগঠক সুলতানা আক্তার, সাংস্কৃতিক সংগঠক জহিরুল ইসলাম মিঠু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নারায়নগঞ্জ জেলার সভাপতি মুন্নি সরদার প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৯৭২ সালে জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসের সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৭৪ সাল থেকে সারা বিশ্বে একশ’রও বেশি দেশে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়। পরিবেশ দিবসের এবারের থিম ‘শুধু একটাই পৃথিবী’। কিন্তু আমাদের দেশের সরকার পরিবেশ দিবসের তাৎপর্য মানে কিনা আমাদের সংশয় আছে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ দিবসে বাণী দেয়, নানা সরকারি অনুষ্ঠানাদি হয়, কিন্তু দেশে পরিবেশ বিপর্যয় দিন দিন বাড়ছে। রাজধানী ঢাকা বিশ্বের অন্যতম প্রধান দূষিত শহর। নারায়ণগঞ্জ জেলা দেশের দূষিত জেলার মধ্যে অন্যতম প্রধান।
নেতৃবন্দ আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা দুটি প্রধান নদী চরম দূষণ ও দখল হয়ে প্রায়
নর্দমায় পরিনত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে মুখে রুমাল চেপে নদী পারাপার হতে হয়। হাইকোর্ট নদীকে জীবন্ত সত্ত্বা বলেছে। দেশে নদী রক্ষা আইন আছে। দূষণের জন্য মূলত দায়ী শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ও কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি। অধিকাংশ কারখানাগুলোতে ইটিপি প্লান্ট নেই। যেগুলোতে আছে তা ব্যবহার হয় না। এগুলো দেখার যেন সরকারের কোন লোক নেই! এর উপর আছে রাঘব-বোয়ালদের নদী দখল। সবমিলিয়ে নারায়ণগঞ্জের প্রাণ শীতলক্ষ্যা-বুড়িগঙ্গা হারিয়ে যাওয়ার দশা। দূষণ ও দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে সরকারের কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেই, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নেই। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দেশের ২৫ ভাগ জায়গায় বনভূমি দরকার। আমাদের আছে অনেক কম, সেক্ষেত্রে ব্যাপক গাছ লাগানো প্রয়োজন। আমাদের দেশে সরকারি উদ্যোগেই গাছ কাটা হচ্ছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোডে শতশত গাছ কাটা
হয়েছে। বিশেষজ্ঞ মতে গাছ রেখেও রাস্তা সম্প্রসারণ করা সম্ভব। শুধু প্রয়োজন সরকারের উপযুক্ত পরিকল্পনা।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আমাদের দেশের পরিবেশ বিপর্যয়ের পলিথিন একটি বড় কারণ। পলিথিন ব্যবহার বন্ধেও সরকার অকার্যকর। আইন মোতাবেক পলিথিন ব্যবহার, বিপনন, উৎপাদন নিষিদ্ধ। বাজারগুলোতে অবাধে পলিথিন ব্যবহার হচ্ছে। খাবার দোকানগুলোও পলিথিনে খাবার বিক্রি করছে। পলিথিনের সাথে খাবার মিশ্রিত হয়ে দেহে কিডনি লিভারে মারাত্মক রোগ তৈরি করে। তথ্য মতে, বাংলাদেশে ২৮% লোক পরিবেশ দূষণজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সুন্দরবন আমাদের প্রাণ। সরকার ভারতের সাথে মিলে সুন্দরবনের মধ্যে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র
স্থাপন করছে। দুনিয়াব্যাপী এ কাজের প্রতিবাদ হচ্ছে। কিন্তু জনমত উপেক্ষা করেই সরকার সুন্দরবনের
রামপালে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে। দেশের জন্য মহাবিপদ নিয়ে আসতে পারে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। দুনিয়ার উন্নত দেশ যখন পারমানবিক বিদ্যুৎ থেকে সরে আসছে আমাদের দেশ তখন সেই প্রকল্প গ্রহণ করছে। ইতোমধ্যে মন্ত্রী বলেছেন, ২০২৩ সালে রামপাল ও ২০২৪ সালে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হবে। পরিবেশ রক্ষা তথা জীবন রক্ষায় অবিলম্বে রূপপুর ও রামপালের এ প্রকল্প বাতিল করতে হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরিবেশ বান্ধব বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। চলতি বাজেটে পরিবেশ রক্ষায় বিগত ৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বরাদ্দ ছিল। এতে বোঝা যায় পরিবেশ রক্ষায় সরকারের অবস্থা কী? ২০২২-২৩ বাজেটে পরিবেশ রক্ষায় বড় বাজেট আমরা প্রত্যাশা করি। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গাসহ খাল-বিল-জলাশয় দূষণ ও দখল মুক্ত করার কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করেন।