নিউজ ব্যাংক ২৪. নেট : দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী সমাজকে গুরুত্বহীন করা বাজেট প্রত্যাখান, নারীর মজুরিবিহীন গৃহস্থালি কাজের আর্থিকমুল্য নিরূপণ, নারীর কাজের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, সরকারিভাবে গ্রাম-শহরে এলাকাভিত্তিক মানসম্পন্ন ডে-কেয়ার সেন্টার নির্মাণ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মজীবী নারীদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ, নারীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, নারী নির্যাতন বন্ধে ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে শুক্রবার ২ জুন বিকেল ৫ টা ৩০ মিনিট সময় সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলার উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন, শহরে মিছিল ও পরে ২ নং রেল গেইট সৈয়দ আলী চেম্বারের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের জেলার সভাপতি মিমি পূজা দাস ও বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী শম্পা বসু, বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ফোরামের সদস্য সেলিম মাহমুদ, নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আক্তার, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুন্নাহার , জেলার সদস্য সুমি আক্তার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রস্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি মুন্নি সর্দার।
নেতৃবৃন্দ বলেন, গতকাল ১ জুন আমাদের দেশের ২৩-২৪ র্অথ বছরের বাজেট সংসদে পেশ করা হয়, প্রায় ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়। সেই বাজেটে নারী উন্নয়নে মাত্র বরাদ্দ করা হয় ৫.২৩ শতাংশ । যা নারী উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় খুবই সামান্য। অন্যদিকে বাজেটে কর এবং ভ্যাটের বোঝা জনগনের উপর চাপানো হয়েছে। প্রধান প্রধান খাত যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিতে বরাবরের মতোই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা আবারো জনগনের উপর মরার উপর খাড়ার ঘা’র মতো।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, গৃহস্থালী কাজ ছাড়া কোন পরিবার ও সমাজ কল্পনা করা যায় না। গৃহ ব্যবস্থাপনার প্রায় ৮০ ভাগ কাজ নারীরা করে থাকেন। কিন্তু পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রে এ কাজের কোন স্বীকৃতি মর্যাদা তো নেই ই বরং এ কাজকে তাচ্ছিল্য করা হয় সবসময়। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির গবেষণায় দেখা যায় যে নারীরা ঘরে প্রতিদিন প্রায় ৪৫ ধরনের কাজ করে। এই কাজের ৭৮-৮৭ শতাংশই অর্থনৈতিক হিসাবে আসে না। তারা বলেন যে নারীর গৃহস্থালী কাজের আর্থিক মূল্য বছওে প্রায় ১১ লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু বারবার গৃহস্থালী কাজের আর্থিক মূল্য জিডিপিতে অন্তর্ভূক্ত করতে বলা আমাদের এই দাবি এ বছরের বাজেটেও তারা অন্তর্ভূক্ত করেন নি। এছাড়াও সরকারি ভাবে এলাকাভিত্তিক মানসম্মত ডে কেয়ার সেন্টার নির্মাণ, কর্মজীবি নারীদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ, নারীর শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ পাবলিক টয়লেট,হাসপাতালে মাতৃসদনসহ আমাদের আরো
গুরুত্বপূর্ণ বরাদ্দ তারা চলতি বছরের বাজেটে দেন নি। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীসমাজ অথচ তাদের চাহিদা কে অগ্রাহ্য করে পেশ করা এই বাজেট মেনে নেওয়া যায়না। বাজেটে শুধু অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ই নয় বরং সরকারের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিও প্রতিফলিত হয়। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীর অগ্রযাত্রার সাথে দেশের এগিয়ে যাওয়া ও যুক্ত। নারী প্রতিনিয়ত বাল্যবিবাহ, মাতৃমৃত্যু, নির্যাতন, ধর্ষণ,হয়রানি, কর্মক্ষেত্রে মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছে । অথচ দেশের প্রশাসনের সে দিকে কোন নজরদারি নেই। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির এই বাজেট নারীবান্ধব তো নয়ই বরং জনগনের মৌলিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রেও তা অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে বৈষম্যমূলক এই বাজেট প্রত্যাহার করে নারীবান্ধব ও নাগরিকবান্ধব সুষ্ঠু বাজেট প্রস্তুত করার দাবি জানান।