নিউজ ব্যাংক ২৪. নেট : জাতীয় ত্রি-পক্ষীয় পরামর্শ পরিষদকে পাশকাটিয়ে শ্রম আইনের সংশোধন অনুমোদনের চেষ্টা বন্ধ, অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল’২৩ প্রত্যাহার এবং আইন করে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণাসহ স্কপের ৯ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে সোমবার ১৬ অক্টোবর বিকাল ৪ টায় দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসাবে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও শহরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ-স্কপ নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক হাফিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় শ্রমিক লীগ নারায়ণগঞ্জ জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট হুমায়ুন কবীর, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লব, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আব্দুল হাই শরীফ, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি হাফিজুর রহমান, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের জেলার সাধারণ সম্পাদক বিমল কান্তি দাস, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান, নৌ পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মাস্টার।
নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ-স্কপ বাংলাদেশের ৭ কোটি ৩৪ লাখ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। শ্রমিকদের প্রতিনিধি হিসাবে তাদের যেকোনো
অর্জিত অধিকার সংকোচনের যেকোনো প্রচেষ্টা রুখে দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো স্কপের নৈতিক দায়িত্ব। শ্রম আইন, বিধিমালা বা শ্রম ও শিল্প সম্পর্ক বিষয়ে যেকোনো নীতি প্রণয়নের প্রধান কাঠামো ত্রি-পক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ। আই.এল.ও কনভেনশন এবং রীতি অনুযায়ী শ্রম আইন প্রণয়ন বা সংশোধনে মন্ত্রীসভায় অনুমোদনের আগে ত্রি-পক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি) এর সভায় আলোচনা এবং অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু আমরা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানতে পেরেছি যে গত ৯ অক্টোবর মন্ত্রীসভায় শ্রম আইনের সংশোধনী অনুমোদন করা হয়েছে কিন্ত এখন পর্যন্ত এই প্রস্তাবিত সংশোধনী ত্রি-পক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি) এর সভায় আলোচিত বা অনুমোদিত হয়নি। এর ফলে শ্রম আইনসহ শ্রম সংক্রান্ত নীতিগত বিষয় অনুমোদন করার আইনি প্রক্রিয়াকে লঙ্ঘন করার একটি খারাপ উদাহরণ তৈরি করা হলো। অপরদিকে শ্রম আইন সংশোধনের দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় শ্রমিক সংগঠন সমুহের প্রস্তাব, মালিকপক্ষ ও সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া প্রস্তাবগুলো নিয়ে যে পর্যালোচনা করা হয়েছিল এবং তার ভিত্তিতে শ্রম আইন সংশোধনীর যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হলো যা শ্রমিকদের মধ্যে আস্থাহীনতা বাড়াবে। টিসিসি-কে পাশকাটিয়ে শ্রম আইনের সংশোধনী অনুমোদনের চেষ্টা স্কপসহ দেশের সকল শ্রমজীবীদের বিক্ষুদ্ধ করেছে এবং স্কপ প্রস্তাবিত সংশোধনী পুনর্বিবেচনার জন্য টিসিসি-তে ফেরত পাঠানোর দাবি জানাচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, গত ৬ এপ্রিল অত্যাবশক পরিষেবা বিল জাতীয় সংসদে উত্থাপনের পর থেকেই বিভিন্ন পর্যায়ে সমাবেশ, মিছিল, স্মারকলিপি পেশের
কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে অগণতান্ত্রিক এই বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিলের মাধ্যমে শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তার
সর্বশেষ হাতিয়ার ধর্মঘট করার অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে। ধর্মঘটের অধিকার আইএলও কনভেনশন, বাংলাদেশের শ্রম আইন ও সংবিধানের সাথে সংগতিপূর্ণ। তাই নিঃশর্তে শ্রমিক অধিকারের সাথে সাংর্ঘষিক এই বিলটি প্রত্যাহার করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে আইন করে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা, মালিকানা নির্বিশেষে প্রতিটি শিল্প খাতের শ্রমিকদের
মজুরি পুণর্নির্ধারণ, শ্রমজীবী পরিবারের সামাজিক সুরক্ষা, রেশন প্রদানসহ ৯ দফা দাবি জানিয়ে আসছে। স্কপের ৯ দফা নিয়ে সরকারের বাস্তবায়নে কোনো
উদ্যোগ নেইনি। এই অবস্থায় শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সবার জন্য শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, অর্জিত সকল অধিকার রক্ষা এবং নতুন অধিকার প্রতিষ্ঠায় স্কপ লাগাতার লড়াই চালিয়ে যাবে। জাতীয় ন্যূনতম মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার
প্রতিষ্ঠায় স্কপ লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাবেই যাবে। আসুন আমরা আমাদের শক্তিকে সুসংহত করে শোষণ নির্যাতন জুলুমের বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণির
ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামকে জোরদার করা।