নিউজ ব্যাংক ২৪ ডট নেট : পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক ১৯৭১ সালের ২৯ শে নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলাধীন বক্তাবলী ইউনিয়ন এলাকায় গণহত্যায় ১৩৯জন শহীদ হয়েছিল। তাদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রতিবছর ২৯শে নভেম্বর দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেন স্থানীয় জনসাধারণ, জনপ্রতিনিধি ও সরকারী উদ্যোগে। সকাল থেকে কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়ার মাধ্যমে কর্মসূচীর আরম্ভ হয়। এরপর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য স্মৃতিস্তম্বে ফুলের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। পরিশেষে শহীদদের গণ কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ জসিম উদ্দিনসহ স্থানীয় জনসাধারণ।
রবিবার ২৯ নভেম্বর সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোঃ জসিম উদ্দিন শহীদদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে বক্তাবলী গণহত্যা দিবস উপলক্ষে দোয়া, আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলেন, ২৯ নভেম্বর বক্তাবলীতে যে হত্যাযজ্ঞ হয়েছিলো সেটা এই অঞ্চলের সবচাইতে বড় হত্যাযজ্ঞ। পাশের জেলা মুন্সিগঞ্জ থেকেও মুক্তিযোদ্ধারা এখানে এসে আশ্রয় নিত। যারা সেদিন শহীদ হয়েছিলো তাদেরতো আর ফিরে পাবোনা কিন্তু তাদের পরিবারের লোকজন রয়েছে। তাদেরকে শুধু বছরের একটি দিনে স্মরণ করলেই হবেনা বরং তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এমন কিছু করতে হবে যাতে করে সবসময় তাদের কথা আমাদের স্মরণ করতে পারি। এজন্য আমরা বক্তাবলী শহীদ উচ্চ বিদ্যালয় বা অন্যকোন প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারি।
তিনি আরো বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা একটি স্বাধীন দেশ দেখতে চেয়েছিলো, একটি সুন্দর প্রজন্ম দেখতে চেয়েছিলো। আমাদের প্রজন্মকে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে জানাতে হবে। তারা যেন কিশোর গ্যাং বা মাদকের সাথে জড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারেও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।
ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বক্তাবলী ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলীর সার্বিক তত্বাবধানে এবং বক্তাবলী ইউপি’র আয়োজনে অনুষ্ঠিত সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা বারিক, ফতুল্লা থানার ওসি আসলাম হোসেন, থানা আ’লীগের সাবেক ধর্ম বিয়ষক সম্পাদক আবুল হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর ইসলাম, বক্তাবলী ইউপি আওয়ামীলীগের সভাপতি আফাজউদ্দিন ভূইয়া প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের এই দিনে ভোরে হানাদার বাহিনী পুরো বক্তাবলী ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধারাও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। চার ঘণ্টা চলে সম্মুখযুদ্ধ। একপর্যায়ে পিছু হটে হানাদার বাহিনী। তবে যাওয়ার আগে তারা বক্তাবলী পরগনার ২২টি গ্রামের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং নিরস্ত্র ১৩৯ জনকে গুলি করে হত্যা করে। বক্তাবলী পরিণত হয় ধ্বংসস্তুপে।