9 Agrohayon 1431 বঙ্গাব্দ ০৯-১২-২০২২
Home / সারাদেশ / ধারের টাকা চাওয়ায় ইর্ষাণিত হয়ে ৫ হাজার টাকা কন্ট্রাকে হত্যা- পিবিআই

ধারের টাকা চাওয়ায় ইর্ষাণিত হয়ে ৫ হাজার টাকা কন্ট্রাকে হত্যা- পিবিআই

নিউজ ব্যাংক ২৪. নেট : মানিকগঞ্জের দৌলতপুর থানার কাকনা বাজার থেকে আব্দুর রহিম মিয়া (৪২) নিখোঁজের পর তার লাশ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় জড়িত মূল পরিকল্পনাকারীসহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। ধারের টাকা চাওয়ায় উচিত শিক্ষা দিতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, বিল্লাল হোসেন (৩৮), আশিক হোসেন ওরফে মনির (২৫) ও শাহিনুর ইসলাম ওরফে সোহান (৪০)।

শনিবার ১০ জুন দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডির পিবিআই সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মানিকগঞ্জ জেলার পিবিআই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন।

পিবিআইয়ের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে বিল্লালের কাছে হত্যার শিকার আব্দুর রহিম মিয়া ধারে দেয়া টাকা পেতেন। মুলত সেই টাকা চাইলে তাকে উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্যই হত্যার পরিকল্পনা করেন তারা। পরে কোমল পানিয়র সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে রহিমকে খেতে দেন তারা। পরে তিনি ঘুমিয়ে পড়লে নাক চেপে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। পরে মুখে বিষ ঢেলে দেয়ার পর লাশ স্থানীয় কাকনা উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনের ঝোপে ফেলে দেন তারা।

এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, নিহত আব্দুর রহিম মিয়া একজন অত্যন্ত দরিদ্র, নিরীহ ও অসহায় প্রকৃতির লোক ছিলো। কাকনা বাজারে বিভিন্ন দোকানদার ও বাজারে আগত লোকজনের ফরমায়েশ করে পাওয়া টাকা দিয়ে তার সংসার চলতো। এছাড়াও প্রতি ঈদে স্থানীয় স্বচ্ছেল লোকদের কাছে তিনি ঈদ কার্ড বানিয়ে সাহায্য চাইতেন। এভোবে তার কিছু টাকা জমে। সেই টাকা তিনি এলাকায় ধার দিয়ে লাভ নিতেন। আবার অনেককে টাকা দিয়ে সুদ নিতেন। ওই এলাকার গ্রেফতারকৃত বিল্লাহ হোসেন নিহত রহিম মিয়ার কাছ থেকে টাকা ধার নেন। কিন্তু সেই টাকা চাইলে তিনি গড়িমসি শুরু করেন। এরই মাঝে তিনি তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এজন্য হত্যায় সহযোগিতা করার জন্য তিনি তার প্রতিবেশী আশিক হোসেন ওরফে মনির ও শাহিনুর ইসলাম ওরফে সোহানকে টাকার বিনিময়ে ভাড়া করেন।

যেভাবে হত্যা করা হয়

গত ৫ জুন গ্রেফতারকৃত আশিক কাকনা বাজার থেকে সিগারেট ও কোমল পানিয় (গিয়ার) নিয়ে আসেন। এরপর তারা সেই বাজারের রহমান ডাক্তারের দোকানের সামনে রহিমকে পেয়ে ডাক দেন। এসময় রহিম মনিরের হাত ব্যাথার জন্য ঝাড়ফুক করতে বলেন। বিনিময়ে তাকে ১০০ টাকা দেয়া বলে প্রলোভন দেখানো হয়। ওই সময় রহিমকে প্রথমে সিগারেট খেতে দেয়া হয়। পরে গিয়ার বোতলে ঘুমের ওষুধ মেশানো কোমল পানিয় তাকে খেতে দেয়া হলে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। এরপর তারা ঘটনাস্থল থেকে চলে আসেন। পরে রাত ১১ টায় আবারও গিয়ে তারা দেখতে পান রহিম অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। ওই সময় তাদের মধ্য থেকে সোহান দুই হাতে গ্লাভস পরে রহিমের মুখ ও নাক চেপে ধরলে তার নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে শাহিনুর একটি বিষের বোতল থেকে রহিমের মুখে বিষ ঢেলে দেন। তারপর তারা নিহতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি, বিষের বোতল ও হ্যান্ড গ্লাভস পাশের খালে ফেলে দেন। এই হত্যায় অংশ নেয় মনির ও আশিক। হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে তারা মুল পরিকল্পনাকারী বিল্লালকে ফোন করে বিষয়টি জানায়। চুক্তি অনুয়ায়ী তাদের মধ্যে মনির বিল্লালের কাছে ৫ হাজার টাকা নেন। কিন্তু কথা ছিল হত্যাকাণ্ডটি ঘটালে তাদেরকে ১০ হাজার টাকা দেয়া হবে।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় বিল্লালকে গ্রেফতারের পাশাপাশি মনির ও আশিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের ভাষ্যমতে, হত্যায় ব্যবহৃত বিষের বোতল, নিহতের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

এর আগে, গত ৫ জুন মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানার কাকনা বাজার থেকে নিখোঁজ হন আব্দুর রহিম মিয়া (৪২)। পরে তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে পরিবার। কিন্তু কোথাও খুঁজে পায়না। এর পরদিন কাকনা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ ও আশপাশ এলাকায় দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পান এলাকাবাসী। স্থানীয় লোকজন বিদ্যালয়ের পিছনের খালের আশেপাশে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে বিদ্যালয়ের প্রাচীর দেওয়ালের পশ্চিম পাশের বাঁশঝাড় সংলগ্ন খালের পাড়ে নিখোঁজ আব্দুর রহিম মিয়ার লাশ দেখতে পান। পরে তারা বিষয়টি দৌলতপুর থানা পুলিশকে অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পরে নিহতের ভাই মিন্টু মিয়া অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জ দৌলতপুর থানায় একটি মামলা করেন। সেই মালমায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন...

হাজীগঞ্জে শিশু বলাৎকার মাদ্রাসা শিক্ষক কারাগারে

নিউজ ব্যাংক ২৪. নেট : চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে মো. ইসমাঈল হোসাইন (২৫) নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষকের …