নিউজ ব্যাংক ২৪ ডট নেট : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য খলিলুর রহমান খলিল এক বিশেষ সাক্ষাৎকারমূলক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ‘সমাজতান্ত্রিক ভূতের ভয়ে তটস্থ পুঁজিবাদ’ শিরোনামে গণমাধ্যমকে জানায়,
দুনিয়া জুড়ে পুঁজিবাদের বিকাশ যখন এক অবিশ্বাস্য মাত্রায় উন্নিত তখন কোভিড-১৯ নামের এক অদৃশ্য মরণঘাতি অতি ক্ষুদ্র এক ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে বায়ু দ্বারা নির্গত হয়ে গোটা দুনিয়াকেই করেছে স্থবির। প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে আর দিন দিনই বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। দুই শতাধিক রাষ্ট্র হয়েছে আক্রান্ত। দেশে দেশে চলছে লকডাউন, কারফিউ, সাধারণ ছুটি। কলকারখানা বন্ধ, রাস্তায় চলছেনা পরিবহন, হাট-বাজার দোকান পাট, শপিংমল, বার রেস্তোরা সর্বত্রই জনমানবহীন। সারা দুনিয়া আজ কোলাহলহীন যেন এক ভূতের নগরী। বিশ্বের তাবৎ চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ বলছেন ঘরে থাকাই নিরাপদ; একজন থেকে অপরজনের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখার মধ্যেই আপাদত করোনা সংক্রামন থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়।
করোনা সংক্রামনের ভয়াবহতার ফল স্বরূপ বিশ্ব জুড়ে শিল্প কলকারখানা তথা উৎপাদনযন্ত্রে স্থবিরতা আসায় কর্পোরেট মালিকগণ ইতোমধ্যেই সীমাহীন দিশেহারা হয়ে পরেছেন। ফলে এ সকল পুঁজিবাদী মুনাফা খোররা বিশ্বের কোথাও কোথাও নামকাওয়াস্তে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে উৎপাদন কার্য চালুর চেষ্টা করছে। এতে অনিবার্য ভাবেই বাড়ছে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা।
বিশ্বের বহু পুঁজিবাদী রাষ্ট্র তাদের নিজ দেশের জনসাধারণের জীবন রক্ষায় চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে পারননি। আর তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে চিকিৎসাতো দুরের কথা লকডাউন, কারফিউ কিংবা সাধারণ ছুটির কারণে কর্মহীন হয়ে পরা মানুষের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা দিতেই তারা চুড়ান্তভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে।
আর তাই একদিকে তৃতীয় বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তাহীন মানুষজন রাষ্ট্র ও সরকারের প্রতি চরমভাবে হতাশ হয়ে নিজের উদ্যোগে জীবন বাচাঁতে বিক্ষিপ্তভাবে ঘর থেকে বেড়িয়ে পরতে শুরু করেছে; অপরদিকে দিশাহীন কর্পোরেট পুঁজির মালিকরা তাদের পুঁজির সাময়িক সংকট ঠেকাতে শ্রমিদেরকে ঘর থেকে টেনে বের করে আনছেন। যার পরিনতিতে বিশ্ব জুড়েই ভযংকর মহামারীকে আলিঙ্গন করার শংকা তৈরী হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বের দেশে দেশে পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ও তার শাসকদের বিশেষ করে খাদ্য ও স্বাস্থ্য খাতে সীমাহীন অনিয়ম দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে ইতোমধ্যে পৃথীবি জুড়ে লুটেরা ধণীকশ্রেণীর রাষ্ট্র ব্যবস্থাসমূহের প্রতি সর্বসাধারণের ক্ষোভ, ঘৃণা এবং নিন্দার ঝড় উঠছে। পুজিবাদী ব্যবস্থা যে চুরান্ত বিচারে জনগনের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে পারেনা করোনা সেটাই বিশ^বাসীকে একদম চোখে আঙ্গুল দিয়ে নগ্নভাবে দেখিয়ে দিল।
অপরপক্ষে উত্তর কোরিয়া, কিউবা, ভিয়েতনামসহ সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহ করোনা মোকাবেলায় বিশ্ববাসীকে যে দুর্দান্ত সফলতা দেখিয়েছেন তা এই পুঁজিবাদী দুনিয়ার কাছে এক বিশ্বয়। করোনা পরিস্থিতিতে এসব দেশে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সহযোগীতা থাকার কারণে মানুষের মাঝে কোন প্রকার খাদ্য সংকটই তৈরী হয়নি, চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু হয়নি কারোর। এমন কি কিউবা ও ভিয়েতনামের মতো ছোট ছোট রাষ্ট্র তাদের নিজ দেশের জনগণের সর্বোচ্চ সাস্থসেবা নিশ্চিত করে বিশ্বের বহু দেশে ডাক্তার ও চিকিৎসা সামগ্রী পাঠিয়ে এই বিশ্ব সংকটে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। বহু রাষ্ট্রে চিকিৎসক ও চিকিৎসা সামগ্রী দিয়ে সহযোগীতা করছে মাওসেতুং-এর চীন। যা বিশ্ববাসীর সামনে এখন নিঃসন্দেহে দৃশ্যমান এক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।
আবার এসব দেখে কর্পোরেট দুনিয়ার জাতাকলে পিষ্ট হওয়া খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থা, শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো মানবিক মৌলিক অধিকার বঞ্ছিত মানুষজন যদি উত্তর কোরিয়া, কিউবা, ভিয়েতনামের মতো শতভাগ মানুষের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার দিকে মনোযোগ নিবন্ধন করে বসেন সেই আশংকাতে কর্পোরেট দুনিয়ার পরিচালকরা সমাজতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রী নেতৃত্ব সম্পর্কে ইতোমধ্যেই যারপর নাই বেফাঁস মিত্থাচার করারার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তারা উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্র প্রধান কিম জন ওনের মিথ্যা মৃত্যুর খবর দিয়ে বিশ্ববাসীর নজড় ভিন্ন দিকে সরিয়ে নিতে সচেষ্ট হলেন। কিম জন ওন কেন পৃথীবির সকল মানুষ এমন কি সকল প্রাণীইতো একদিন মারা যাবে আর এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু কেউ মারা গেলে সেখানে আনন্দের কি আছে? মার্কিন অর্থায়নে পরিচালিত সংবাদ মিডিয়া এস.কে, হংকংয়ের এইচ.কে.এস স্যাটেলাইট টেলিভিশন, ভারতের সনি টিভি এমনকি সিএন এন সংবাদ মাধ্যমে মহাসমারোহে কিম জন ওনের মিথ্যা মৃত্যুর খবর প্রকাশ করা হলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিম জন ওনের লাশবাহী কফিনের দৃশ্য প্রদর্শন করা হলো। পুঁজিবাদের মোড়ল মার্কিন রাষ্ট্রপতি কিম জন ওনের মিথ্যা মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে রসিকতা করে বিশ্ববাসীর দৃষ্টিকে ঐ দিকে কেন্দ্রীভূত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হলেন। এসব কিছুর মধ্যো দিয়ে কি একথাই প্রমাণীত হয়না, দুনিয়াব্যাপী কর্পোরেট পুজিঁর মালিক ও লুটেরা ধণিকশ্রেণীর পুঁজিবাদী রাষ্ট্রসমূহ আজ পূণরায় সমাজতান্ত্রিক ভুতের ভয়ে ভীত হয়ে উঠেছে; কিংবা সমাজতান্ত্রিক ভূতের ভয়ে তটস্থ আজকের পুঁজিবাদ।