নিউজ ব্যাংক ২৪. নেট : নারায়ণগঞ্জ বন্দরে ডংজিং লংজিবিটি নামক এক চায়না ব্যাটারি কারখানার দূষণের কারণে হাজারো মানুষ, স্থানীয় পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে। বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের পাতাকাটা, ২৫ নং ওয়ার্ড এর লক্ষণখোলা, দাসেরগাঁর এলাকার প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে এখন চোখের অসুখ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ রোগবালাই দেখা দিচ্ছে।
এছাড়াও এলাকাবাসীর অভিযোগ কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যের কারণে জমিতে ফসল হচ্ছে না, গাছে ফল ধরে না এবং পুকুরেও মাছ বাঁচতে পারছে না। ব্যাটারি কারখানা থেকে অ্যাসিড মিশ্রিত বর্জ্য পানি ও সিসাযুক্ত ছাই ছড়িয়ে পড়ছে উন্মুক্ত পরিবেশে। প্রতিবেদক কারখানা কর্তৃপক্ষের নিকট এই পরিবেশ দূষণ এর বিষয়ে জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এর আগেও বেশকয়েকবার এই কারখানাটির বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করলেও অদৃশ্য ইশারায় পুনরায় আবার বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে এরা পরিবেশ দূষণে আবারো মরিয়া হয়ে উঠেছে। এছাড়াও এই কোম্পানির স্থানীয় দালালদের বিরুদ্ধে আদালতের মামলা চলাকালীন সময়ে অন্যের জায়গা জোর পূর্বক দখল করে শেড করে ওয়্যারহাউজ নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে৷
অপরদিকে ডংজিং ব্যাটারি কারখানার থেকে মাত্র ৩০০ গজ দূরে আলহাজ্ব ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় অবস্থিত। সেখানে প্রায় হাজার খানেক ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাস্থ্য অত্র কারখানার দূষণের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে। এলাকাবাসী প্রতিবেদককে জানায়, অতি দ্রুত জানা এই কোম্পানির বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
এই ধরনের কারখানার বিষয়ে আইনে কি আছে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন, ২০১০-এর সংজ্ঞায়ন অংশে ‘ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্যের’ সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যেকোনো বর্জ্য, যা নিজস্ব ভৌত বা রাসায়নিক গুণগত কারণে বা অন্য কোনো বর্জ্য বা পদার্থের সংস্পর্শে আসার কারণে বিষক্রিয়া, জীবাণু সংক্রমণ, দহন, বিস্ফোরণক্রিয়া, তেজস্ক্রিয়া, ক্ষয়ক্রিয়া বা অন্য কোনো ক্ষতিকর ক্রিয়া দ্বারা পরিবেশের ক্ষতিসাধনে সক্ষম। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন, ২০১০-এর ৪ নং ধারার ৬ (গ) অংশে ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য উৎপাদন, আমদানি, মজুদকরণ, বোঝাইকরণ, পরিবহনের ক্ষেত্রে বাধা-নিষেধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ওই ধারায় বলা হয়েছে,পরিবেশের ক্ষতিরোধ কল্পে সরকার অন্যান্য আইনের বিধানসাপেক্ষে বিধি দ্বারা ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য উৎপাদন,প্রক্রিয়াকরণ, ধারণ, মজুদকরণ, বোঝাইকরণ, সরবরাহ, পরিবহন, আমদানি, রফতানি, পরিত্যাগকরণ, ডাম্পিং ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। যদি কেউ এ ধারা লঙ্ঘন করে তাহলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং প্রথম অপরাধের ক্ষেত্রে অনধিক দুই বছর বা অনধিক ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী প্রতিটি অপরাধের ক্ষেত্রে অন্যূন দুই বছর, অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ড বা অন্যূন ২ লাখ, অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড কার্যকর হবে।’ বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ মাঝেমধ্যে হতে দেখা যায়, কিন্তু তার পরও কীভাবে জনবসতি ও বাস্তুতন্ত্র বিপন্ন করে বিপজ্জনক এসব কারখানা গড়ে ওঠে সেটাই বিস্ময়কর।
এই বিষয়ে বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বি. এম কুদরত এ খুদা’র নিকট মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, এদের বিরুদ্ধে আমরা অতীতেও ব্যবস্থা নিয়েছিলাম৷ এছাড়াও শিল্প মন্ত্রণালয়ে আমরা লিখিত দিয়েছি, সরকারি বিধি নিষেধ আইন মেনে এদের বিরুদ্ধে আমরা পুনরায় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আমরা প্রায় তিন চার মাস আগেও এই ডংজিং ব্যাটারি ফ্যাক্টরির গ্যাস বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করেছিলাম৷ তবে তারা সংশোধনের জন্য আবেদন করেছে, ইটিপি প্লান্ট করেছে বলে আমি জেনেছি এবং সেখানে প্রায় ১০০ ফুট এর মতো উঁচু করে একটি চিমনি করেছে।
কারখানার পাশে স্কুল আছে তা থাকা সত্বেও তারা কিভাবে পরিবেশের ছাড়পত্র পেল সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেখানে কোন স্কুল আছে কিনা কিংবা স্কুলটি কবে হয়েছে তা আমি জানি না,তবে পাশে একটি মাদ্রাসা ছিল পরে সেই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সাথে তাদের সংশোধন হয়েছে সম্ভবত এটটুকুই জানি।