4 Poush 1431 বঙ্গাব্দ ০৯-১২-২০২২
Home / খবর / নারায়ণগঞ্জে কমরেড হেনা দাসের জন্ম শতবর্ষ উৎযাপন

নারায়ণগঞ্জে কমরেড হেনা দাসের জন্ম শতবর্ষ উৎযাপন

নিউজ ব্যাংক ২৪. নেট : কমরেড হেনা দাসের জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে সোমবার ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  সকাল ৯টায় নারায়ণগঞ্জ মহাশ্মশাণে সিপিবি নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি কমরেড হাফিজুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কমরেড শাহ আলম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড আব্দুল্লাহ আল কাফী রতন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এডভোকেট মন্টু ঘোষ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডাঃ ফওজিয়া মোসলেম, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জেলা সভাপতি লক্ষ্মী চক্রবর্তী, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের জেলা সাধারণ সম্পাদক বিমল কান্তি দাস প্রমূখ।

শুরুতে কমরেড হেনা দাসের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটি, নারায়ণগঞ্জ
জেলা কমিটি, নারায়ণগঞ্জ শহর কমিটি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটি, সমমনা, বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ,
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, খেলাঘর, সমাজ অনুশীলন কেন্দ্র, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও কমরেড হেনা দাসের পরিবারবর্গ।

আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, কমরেড হেনা দাস বৃহত্তর সিলেট জেলার মেয়ে। জীবনের দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ শহরে। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। মৃত্যুকালে মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন। তিনি শিক্ষক আন্দোলনেরও নেতৃত্ব দিয়েছেন। জীবনে বহুমাত্রিক লড়াই-সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন। নারী নেত্রী হেনা দাস ১৯২৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সিলেট শহরে জন্ম গ্রহন করেন। পৈতৃক নিবাস হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানায়। তিনি ছিলেন লাখাই ঐতিহাসিক দত্ত পরিবারের মেয়ে। তাঁর পিতা ছিলেন রায় বাহাদুর এডভোকেট সতীশ চন্দ্র দত্ত এবং মাতা ছিলেন মনোরমা দত্ত। মনোরমা দত্ত ছিলেন চুনারুঘাট থানার নরপতি গ্রামের জমিদার জগৎ চন্দ্র বিশ্বাসের মেয়ে। হেনা দাসের পিতা রায় বাহাদুর এডভোকেট সতীশ চন্দ্র দত্ত ১৯৩০ সালে হবিগঞ্জ সদর-লাখাই- বানিয়াচং- আজমিরীগঞ্জ আসন থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। রায়বাহাদুর এডভোকেট সতীশ চন্দ্র দত্ত কিছুদিন স্পীকারের দায়িত্ব পালন করেন।

হেনা দাস অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে সিলেটে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ছোটবেলা হতেই হেনা দাস প্রগতিশীল চিন্তার মানুষ ছিলেন। তিনি বিপ্লবী আন্দোলনে এতটাই রাডিক্যাল ছিলেন যে চলন্ত ট্রেনে লাফ দিয়ে উঠতে নামতে পারতেন। হেনা দাস গণনাট্য সংঘের একজন শিল্পী ছিলেন। তিনি ছিলেন হেমাঙ্গ বিশ্বাসের অন্যতম সহযোগী। তিনি গান গাইতেন, নাটক করতেন এবং একজন ভালো নিত্যশিল্পীও ছিলেন। তিনি ছিলেন গণনাট্য সংঘের সামনের সারির একজন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মে মাসে ৪০০ জনের একটি দল নিয়ে মুন্সীগঞ্জ থেকে লঞ্চে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় যান। তারপর ২৫/৩০ মাইল পায়ে হেটে প্রথমে ভারতের আগরতলা যান। তারপর কলকাতায় চলে যান। কলকাতায় পার্ক সার্কাস লেনে কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্র স্থাপন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন শরণার্থী শিবিরের বিদ্যালয় প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় শিক্ষক সমিতি বিদেশী সহায়তা পান। তিনি এই সাহায্য দিয়ে শরণার্থী শিবিরে ৫০টি বিদ্যালয় খোলেন। শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া শিক্ষকদেরকে এসব বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় নারী ও শিশুদের পোশাক এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্যাদি সংগ্রহ করে বিতরন করতেন। শিশুদের পড়াশুনার জন্য অনেক ভূমিকা রাখে। ১৯৯৬ সালে শিক্ষা সংগ্রামের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়। সেই কমিশনের অন্যতম সদস্য ছিলেন হেনা দাস। কমিশনে কাজ করেছেন দিনরাত। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির মুখপাত্র হিসেবে প্রকাশিত হয় শিক্ষাবার্তা। শিক্ষাবার্তার সম্পাদক ছিলেন হেনা দাস। হেনা দাস বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বই হল ‘স্মৃতিময় ৭১’, ‘পঞ্চম পুরুষ’, লাখাই গ্রামের ইতিহাস নিয়ে আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘চার পুরুষের কাহিনী’। তিনি বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন, সেমিনারে গিয়েছেন। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধি হিসেবে বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়াতে আন্তর্জাতিক শিক্ষক সংগঠন ঋওঝঊ-র সম্মেলনে যোগ দেন হেনা দাস। এডুকেশনাল ইন্টারন্যাশনাল গঠনের পর নেপালের রাজধানী কাঠমুন্ডতে অনুষ্ঠিত সার্ক অঞ্চলের মহিলা শিক্ষকদের কর্মশালায় যোগ দেন। ১৯৮৯ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বহরমপুরে অনুষ্ঠিত অল বেংগল টিচার্স এসোসিয়েশনের সম্মেলনে যোগ দেন। ১৯৯৪ সালে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠিত এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক শিক্ষক সম্মেলনে যোগ দেন। সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শিশু বর্ষ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তিনি কলমও চালিয়েছেন। লিখেছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকায়। কোন উচ্চাকাক্সক্ষা ছিল না, শিক্ষক পেশায় সারা জীবন কাটিয়ে গেছেন। ২০০৯ সালের ২০ জুলাই মহিয়সী নারী পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের জনগন তাঁকে শ্রদ্ধা জানান। এর পর দীর্ঘদিনের কর্মস্থল নারায়ণগঞ্জের মাসদাইর মহাশ্মশানে তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। নারায়ণগঞ্জ মহাশ্মশানে তার স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়।

আরও পড়ুন...

খেলার মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানের গাইড লাইন বিষয়ক আলোচনা সভা

নিউজ ব্যাংক ২৪. নেট : অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে শরীরচর্চা ও কায়িক পরিশ্রম নিশ্চিতে খেলার মাঠ, …