10 Agrohayon 1431 বঙ্গাব্দ ০৯-১২-২০২২
Home / সংগঠন সংবাদ / না’গঞ্জে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের মানববন্ধন- নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস পালন

না’গঞ্জে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের মানববন্ধন- নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস পালন

নিউজ ব্যাংক ২৪. নেট : নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ঘরে বাহিরে নারী নির্যাতন বন্ধ, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, সম্পত্তির উত্তরাধিকারসহ সর্বত্র নারী-পুরুষ সমান অধিকার নিশ্চিত, নারায়ণগঞ্জ শহরে ও সব উপজেলায় সরকারি নারী হোস্টেল, ডে-কেয়ার সেন্টার ও নারীবান্ধব পাবলিক টয়লেট নির্মানের দাবিতে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫ টা ৩০ মিনিটে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মিমি পূজা দাস, বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আক্তার, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুন্নাহার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি মুন্নি সর্দার, অর্থ সম্পাদক নাছিমা আক্তার।

নেতৃবৃন্দ বলেন, ২৪ আগস্ট নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। ১৯৯৫ সালের এই দিনে দিনাজপুরে গৃহকর্মী ইয়াসমিনকে পুলিশ ধর্ষণ ও নির্যাতন করে হত্যা করে। বোন হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে সেদিন আন্দোলনে দিনাজপুরে ৭ জন ভাইকে জীবন দিতে হয়েছিল। এই দিবসটি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসাবে বাংলাদেশে পালিত হয়ে আসছে। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও নারীরা আজ ঘরে-বাইরে, পাহাড়ে-সমতলে, পথে-গণ পরিবহনে, কর্মক্ষেত্র- শিক্ষাক্ষেত্র সব জায়গায় নির্যাতিত। নারীর প্রতি সহিংসতা দিন দিন আরও বেড়েই চলেছে। ইয়াসমিন হত্যার পর কেটে গেছে ২৮ টি বছর! সরকারি বেসরকারি তথ্য বলছে পাঁচ বছর আগের তুলনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এখন গড়ে ৩৫০ টি মামলা বেড়েছে। ধর্ষণের মামলায় ৯৭ শতাংশরই কোন সাজা হয় না। প্রতিনিয়ত নারীর প্রতি বিভৎসতা ও বর্বরতা বেড়েই চলেছে। ধর্ষনের ক্ষেত্রে নারীর বয়স কোন বিষয় নয়। ৬ বছরের শিশু থেকে ৬০ বছরের বৃদ্ধা কেউই রেহাই পাচ্ছে না এই বিভৎসতা থেকে। কঠোর আইনের বিধান থাকা সত্ত্বেও ধর্ষকের কোন উল্লেখযোগ্য শাস্তি হয়নি। গণপরিবহনে নারী নির্যাতন ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। গণপরিবহনে ধর্ষণ ও ডাকাতির মতো ঘটনা দিন দিন বেড়েই যাচেছ। অপরাধীরা বারবার পালাতে পারছে এবং আইনের আওতায় না আসায় একই ধরণের ঘটনা বারবার ঘটেই চলেছে। রক্ষক নিয়েছে ভক্ষকের জায়গা। ক্যান্টনমেন্টের তনুকে ধর্ষন করে হত্যা, দিনাজপুরের ইয়াসমিন পুলিশ কর্তৃক ধর্ষিত হয় ও পরে তাকে হত্যা করা হয়। যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশের জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে সেখানে নারীসহ সাধারণ জনগণ এই
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ত্রাসের শিকার। ইয়াসমিন হত্যার বিচার পাওয়ার জন্য প্রতিবাদ মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ। নির্বিচারে হত্যা করে সাধারণ জনগণকে। কোন ধর্ষণ, খুনের বিচার না হওয়ায় দিন দিন এই নির্যাতন বেড়েই যাচ্ছে। নারী-শিশু নির্যাতন- ধর্ষণ-হত্যা এসব অপরাধের বিচার না হওয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় কারণ সরকার প্রশাসনের সাথে ঘনিষ্ঠতা ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, বাহ্যিকভাবে দেখলে দেখা যাবে দেশে নারী প্রধানমন্ত্রীসহ অনেকে বড় বড় দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু সমাজ মননে আরও অনেক বেশি অবক্ষয় ঘটে চলছে। সারাদেশে নারী শিশু ধর্ষণ- নির্যাতন হত্যা এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ঘরে-বাইরে সর্বত্র যেকোন স্থানে দিনে রাতে যেকোন সময়ে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। বেশিভাগ ঘটনার ক্ষেত্রেই দ্রুত এবং উল্লেখযোগ্য বিচারের নজির দেখা যায় না। আবার পারিবারিক জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই নারী বৈষম্যের শিকার। সমাজে সম্পত্তির উত্তরাধিকার ক্ষেত্রেও নারীর প্রতি বৈষম্য বিরাজমান। গৃহস্থালি কাজ ছাড়া পরিবার চলে না কিন্তু গৃহস্থালি কাজের স্বীকৃতি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নাই। সমকাজে সমমজুরি আইনে থাকলেও বাস্তবে সমস্ত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নারী-পুরুষের তুলনায় কম মজুরি পেয়ে
থাকে। নারীর সস্তা শ্রমকে ব্যবহার করতে মালিকশ্রেণি যতো আগ্রহী, তাদের কাছে ততোটাই উপেক্ষিত নারীর অধিকার, নারীকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দেয়ার দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাষ্ট্রের উদ্যোগ খুবই অপ্রতুল। বিজ্ঞাপন, সিনেমায় নারীকে পন্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। ওয়াজ মাহফিলে নারীকে নিয়ে অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়া হয়। নারীর এ সকল সংকটের মূলে রয়েছে পুরুষতান্ত্রিকতা ও পুঁজিবাদী শোষণমূলক ব্যবস্থা।

নেতৃবৃন্দ বলেন, নারী শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ সামাজিক প্রতিরোধ। সামাজিক প্রতিরোধ আন্দোলনই সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার ত্বরান্বিত করতে সরকারকে বাধ্য করতে পারে এবং একই সাথে অপরাধীরা কোণঠাসা হয়ে পড়বে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস আমাদেরকে অন্যায়কে গুড়িয়ে দেওয়ার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াইরের সেই শিক্ষা দেয়। এ সময় নেতৃবৃন্দ নারী- শিশু ধর্ষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

নেতৃবৃন্দ নারায়ণগঞ্জ শহর ও সব উপজেলায় সরকারি নারী হোস্টেল, ডে-কেয়ার সেন্টার ও নারীবান্ধব পাবলিক টয়লেটের দাবি করেন।

আরও পড়ুন...

মহিলা পরিষদের কেন্দ্র পরিচালিত “জেন্ডার, নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন বিষয়ক সার্টিফিকেট (১৪তম) কোর্স”- এর মাঠকর্ম অনুষ্ঠিত

নিউজ ব্যাংক ২৪. নেট : বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার উপ-পরিষদের উদ্যোগে …