নিউজ ব্যাংক ২৪. নেট : নারীর মজুরিবিহীন গৃহস্থালি কাজের আর্থিকমুল্য নিরূপণ, নারীর কাজের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, সরকারিভাবে গ্রাম-শহরে এলাকাভিত্তিক মানসম্পন্ন ডে-কেয়ার সেন্টার নির্মাণ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মজীবী নারীদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ, নারীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, প্রত্যেক জেলা সদর হাসপাতালে মাতৃসদন নির্মাণে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ, নারীর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, স্বামী পরিত্যক্তা-দুঃস্থ নারীদের পুনর্বাসন করাসহ নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা, নারী নির্যাতন বন্ধে ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাজেটে বরাদ্দ দেয়ার দাবিতে সোমবার ৬ জুন সকাল ১১ টায়
সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলার উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
স্মারকলিপি প্রদানের পূর্বে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে স্মারকলিপি পাঠ করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সংগঠক মিমি দাস ও বক্তব্য রাখেন মহিলা ফোরামের সংগঠক সুলতানা আক্তার।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আগামী ৯ জুন সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ করা হবে। বাজেটের মাধ্যমে শুধু অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নয় সরকারের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিও প্রতিফলিত হয়। নারীর শ্রমের স্বীকৃতি ও সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাজেট বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।গৃহস্থালি কাজ ছাড়া কোন পরিবার ও সমাজ কল্পনা করা যায় না। আর গৃহস্থালি কাজের সিংহভাগই করে থাকেন পরিবারের নারী সদস্যরা। ঘরে সবার জন্য খাবার তৈরি, জামা-কাপড়, তৈজসপত্রসহ ঘরদোরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, শিশুদের লালন-পালন করা, স্কুলে আনা-নেয়া,
পড়ানো, বয়স্ক ও রোগীদের সেবা প্রদানসহ গৃহ ব্যবস্থাপনার প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ নারীরা করে থাকেন। গৃহস্থালি কাজ ছাড়া মানুষের শারীরিক, মানসিক, সাংস্কৃতিক জীবন বিকশিত হওয়া তো দূরের কথা টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু এ কাজের কোন স্বীকৃতি নেই, মর্যাদা নেই এমনকি এ কাজকে তাচ্ছিল্য করা হয় সবসময়। যে নারীরা নিজ গৃহে এই কাজগুলো করেন তাদের কোন পারিশ্রমিক নেই।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, নারীর কাজের অর্থনৈতিক অবদান প্রধানত তিন ভাগে বিভক্ত। প্রথমত, মজুরির বিনিময়ে কাজ এবং টাকা উপার্জনের জন্য স্বনিয়োজিত কাজ, যা জিডিপির হিসাবে যুক্ত হয়। দ্বিতীয়ত, নারীর মজুরিবিহীন
কিছু পারিবারিক কাজ যেমন হাঁস, মুরগী, গবাদিপশু পালন করে বিক্রি করা ইত্যাদি, এর আর্থিক মূল্যও
জিডিপিতে যুক্ত হয়। তৃতীয়ত, নারীর গৃহস্থালি কাজ, যার বাজারমুল্য বা বিনিময় মুল্য নেই, যা বাজারজাত করা যায় না তা জিডিপিতে যুক্ত হয় না এমনকি শ্রম শক্তির হিসেবেও গণ্য হয় না। এইসব অবৈতনিক কাজের মুল্যের
একটা ছায়া হিসাব করেছিল গবেষণা সংস্থা সানেম। তাদের তথ্য অনুযায়ী যদি গৃহস্থালি কাজের আর্থিক মুল্য
হিসাব করা যায় তাহলে তা দাঁড়াবে নারীর ক্ষেত্রে জিডিপির ৩৯.৫৫ শতাংশ এবং পুরুষের ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ। সিপিডির গবেষণায় দেখা গেছে যে নারীর কাজের ৭৮- ৮৭ শতাংশই অর্থনৈতিক হিসাবে আসে না। যেমন, কাপড় ধোয়া, রান্না করা, ঘর পরিষ্কার করা ইত্যদি। তাদের গবেষণায় বেরিয়ে আসে নারীদের গৃহস্থালি কাজের আর্থিক মূল্য ১১ লক্ষ কোটি টাকার উপরে। এই হিসাব করা হয়েছে বাজার প্রতিস্থাপন খরচ পদ্ধতিতে। গৃহকর্ম করতে অন্য কাউকে নিয়োগ দিলে কত টাকা ব্যয় হতো, তার ভিত্তিতে এ হিসাব করা হয়েছে। ঘরে বাইরে নারী যে কাজ করে তার পুরোটা হিসাবে আনলে এবং আর্থিক মূল্য বিবেচনা করলে জিডিপিতে নারী পুরুষের অবদান সমান হবে। তখন আর কেউ বলতে পারবে না যে নারীরা কোন কাজ করে না।
নেতৃবন্দ বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই বিবাহ বিচ্ছেদের পর অর্জিত সম্পত্তি স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সমান ভাগ করার
আইন আছে। অর্থাৎ যদি ২০ বছর সংসার করার পর কোন স্বামী-স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তাহলে এই ২০ বছরে সৃষ্ট মোট সম্পত্তি সমান সমান ভাগ হবে। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতা হলো সংসার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নারীর শারীরিক- মানসিক শ্রম থাকা সত্ত্বেও নারীরা স্বামীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের পর সম্পত্তির প্রায় কোন অংশই পান না। ফলে গৃহিনীরা অসহায় হয়ে পড়েন। অনেক সময় আর্থিক নিশ্চয়তা নেই বলে অনেকে অত্যাচারিত হয়েও স্বামীর সাথে থাকতে বাধ্য হন। অথচ বিয়ের পর ঐ সংসারের যা কিছু সম্পদ-সম্পত্তি অর্জিত হয়েছে গৃহিনী নারীরও সেখানে ভূমিকা আছে। গৃহস্থালি কাজের আর্থিক মূল্য নিরূপণ ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি থাকলে পরিবারের ও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন হতো। পারিবারিক নির্যাতনও অনেকাংশে কমতো।
আমরা মনে করি, নারীর শ্রমের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী ও নারীদের সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনে রাষ্ট্র বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। রাষ্ট্র নারীদের শ্রমের মূল্যায়ন করার মধ্য দিয়ে তার কাজের স্বীকৃতি দিতে পারে। সাথে সাথে একটি থোক বরাদ্দের ব্যবস্থা রাখতে পারে গৃহিনী নারীদের জন্য। স্বামীর সংসারে নির্যাতিত নারী, স্বামী-পরিত্যক্তা ও দুঃস্থ বিধবা নারীদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুনর্বাসনের জন্য এই তহবিল বরাদ্দ হবে।