নিউজ ব্যাংক ২৪. নেট : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) মেগা প্রকল্পে দ্বিতীয় প্রশাসনিক ভবন নির্মাণে ৬ কোটির বেশি টাকা ‘ভুয়া খরচ’ (ফলস বিল) দেখিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তদন্তের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের তথ্য চেয়ে ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছে দুদকের কুষ্টিয়া কার্যালয়।
শুক্রবার (২২ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান দুদকের কাছ থেকে চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘দুদকের কার্যালয় থেকে কিছু তথ্য চেয়ে ১২ মার্চ তারিখ একটি চিঠি এসেছিল। চিঠিতে যা যা চেয়েছিল, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীকে (চিফ ইঞ্জিনিয়ার) সঙ্গে নিয়ে সব তথ্য ১৩ তারিখেই পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন বাকিটা তারা জানবেন, কবে কাকে কখন ডাক দিবেন।’
এর আগে এক উড়োচিঠিতে প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের পঞ্চম বিলের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়। পরে ওই অভিযোগ তদন্তে কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এবার দুদকের তদন্তকে স্বাগত জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘দুদককে আমি অভিনন্দন জানাই। তারা যদি সত্যতা পায়, আমি খুব খুশি হব, সেভাবেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা তখন নেওয়া হবে।’
চলতি বছরের ১২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছানো দুদকের কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিটিতে বলা হয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের দ্বিতীয় প্রশাসন ভবনের সর্বশেষ চলতি বিলে দুটি আইটেমে ভুয়া বিল করে ৬ কোটি ২৫ লাখ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন ও ভাগ বাঁটোয়ারা করে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধানের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের রেকর্ডপত্রের মূল কপি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ে পাঠানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়।
দুদকের চিঠিতে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের রেকর্ডপত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন তৃতীয় পর্যায় শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় প্রশাসন ভবনের এ ব্লকের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চমতলা পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, বি-ব্লক ১০ তলা ভিত্তির ওপর ১০ তলা ভবন নির্মাণ প্রকল্পের বরাদ্দপত্র ও অনুমোদনপত্র, অনুমোদিত প্রাক্কলন, শিডিউলের কপি, দরপত্র বিজ্ঞপ্তি, দরপত্রের তুলনামূলক বিবরণী, চুক্তিপত্রের কপি, কার্যাদেশ, এমবি কপি ও চূড়ান্ত বিলের কপি, কাজ সম্পন্নের সনদ এবং কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদার কর্তৃক সিকিউরিটি মানি জমা সংক্রান্ত রেকর্ড।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র, তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকলে তার বিবরণ এবং সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়, রেজিস্ট্রারের কার্যালয়, বিভিন্ন দপ্তরসহ বিভিন্ন অফিসে একটি ‘উড়োচিঠি’ আসে। এতে উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেগা প্রকল্পের অধীন দ্বিতীয় প্রশাসনিক ভবনের পঞ্চম বিলে ৬ কোটি টাকার অধিক ভুয়া বিল তুলেছেন ঠিকাদার। এছাড়া চিঠিতে সহযোগী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীসহ কয়েকজন প্রকৌশলী, প্রকল্প পরিচালক, শাখা ছাত্রলীগের ১ নম্বর সহসভাপতিসহ পাঁচজন সহসভাপতি ও একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ সাবেক ও বর্তমান ৭ ছাত্রলীগ নেতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম ‘উড়োচিঠির’ অভিযোগ তদন্তে শিক্ষক সমিতির তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেনকে আহ্বায়ক এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ই›িজনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ইসমাইল সাইফুল্লাহকে সদস্য করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটি গঠনের তিন মাস পর চলতি বছরের ৯ মার্চ উপাচার্যের কাছে তিন পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি জমা দেন সদস্যরা।
জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, ‘তদন্ত রিপোর্ট আমরা এই মাসেই প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছি। বাকিটা প্রশাসনই দেখবেন। যদিও প্রশাসন থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। তবে আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের পর্যবেক্ষণ করেই রিপোর্ট তৈরি করে জমা দিয়েছি।’ অধ্যাপক তপন কুমার বলেন, ‘দুদক আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিলÑ আমরা প্রতিবেদন জমা দিয়েছি কি না। আমরা বলেছি, তদন্ত প্রতিবেদন প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছি। তখন তারা জানায়, প্রশাসন থেকে তদন্ত প্রতিবেদন সংগ্রহ করে নেবেন তারা।’
জানতে চাইলে দুদকের কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, ‘তদন্তটি আমরা চলতি বছরের মার্চেই শুরু করেছি। তদন্তের জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে কিছু রেকর্ডপত্র চেয়েছি, তারা পাঠিয়েছেন। এগুলো পর্যালোচনা করার পরেই আমরা পরবর্তী ধাপে যাব। তবে আমরা যেহেতু মাত্রই শুরু করেছি, এখন বলার মতো কিছু নেই।’ দুদকের তদন্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘একটি বিষয়ে সাধারণত অভিযোগ আকারে আসতেই পারে। তবে বিষয়টি যেহেতু দুর্নীতির, আর চিঠিটিরও কোনো নাম ঠিকানা নেই, তাই আমি সঙ্গে সঙ্গেই তদন্ত কমিটি তৈরি করে দিয়েছিলাম। এ নিয়ে তদন্ত কমিটিও যে প্রতিবেদনও দিয়েছে, তা আমরা সিন্ডিকেট মিটিংয়ে নেব।’
উপাচার্য বলেন, ‘উড়োচিঠিতে যেহেতু নাম ও ঠিকানা কিছু নেই, তাই হতে পারে তারা মিথ্যা ভিত্তি বানিয়েছেন। আবার ১০ স্কয়ার ফুটের কাজ হয়েছে, কিন্তু লিখেছে ১২ স্কয়ার ফুট। যাইহোক, এটা ভুলই বলেন বা ইচ্ছাকৃত বলেন, এটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আমি এখনও প্রতিবেদনে সাক্ষর করিনি। এটি সিন্ডিকেটেই ফাইনাল হবে। কাজে যদি কোনো ব্যত্যয় হয়ে থাকে, বা যে পরিমাণ টাকার কথা বলা হয়েছে, সেটা সিন্ডিকেটের ফাইনাল না হওয়া পর্যন্ত আমরা দেব না।’